সোমবার
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধামরাইয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ-চাষিরা

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১০ এএম
সরিষা ফুলের মৌসুমে বক্স থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে খাঁটি মধু
expand
সরিষা ফুলের মৌসুমে বক্স থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে খাঁটি মধু

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের রূপনগর এলাকায় মাঠজুড়ে ফুটেছে সরিষার হলুদ ফুল। পুরো মাঠ জুড়ে ফুলের রঙিন দৃশ্য, আর সেই ফুলের রেণুতে আকৃষ্ট হয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ-চাষিরা।

মেইন রাস্তার পাশে দুই বিঘা জমি দুই মাসের জন্য লিজ নিয়ে ১৫০টি বক্স স্থাপন করেছেন মৌচাষি মোঃ বাদশাহ মিয়া।

সরিষা ফুলের মৌসুমে এসব বক্স থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে খাঁটি মধু। এছাড়াও মধু চাষে বাদশাহর সঙ্গে কাজ করছেন মৌ-চাষি মামুন ও সোবহান। তারা সকলেই রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানা থেকে মধু আহরণের জন্য ধামরাইয়ে এসেছেন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে মৌচাষিদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, এপিস সেরানা জাতের মৌমাছি (খুদে মৌমাছি) ব্যবহার করে আধুনিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ প্রজাতির মৌমাছি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

মধু সংগ্রহের জন্য সরিষা ক্ষেতের আশপাশের নিরাপদ জায়গায় কাঠের তৈরি মৌবক্সগুলো বিছিয়ে রাখা হয়। একেকটি বক্সে মোম দিয়ে তৈরি চার থেকে পাঁচটি মোম সম্বলিত ফ্রেম রাখা হয়। প্রতিটি বক্সেই একটি করে রাণী মৌমাছি রয়েছে। এই রাণী মৌমাছি প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার ডিম দেয়। ১৩ দিন পর ওই ডিম থেকে মৌমাছির বাচ্চা বের হয়।

এরপর মোট ২৬ দিন তারা সরিষার ফুল থেকে রেণু ও মধু সংগ্রহ করে। সেখান থেকেই সপ্তাহে একবার করে মধু সংগ্রহ করা হয়। ৩৯ দিন বয়স হলে মারা যায় মধু সংগ্রহকারী এসব সাধারণ মৌমাছি।

এ ব্যাপারে মৌ-চাষি বাদশাহ বলেন, আমরা বছরে ছয় মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। বাকি ছয় মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষিয়ে রাখতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়।

প্রতিটি বক্স থেকে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। উৎপাদিত এসব খাঁটি মধু কিনে নেয় সরিষা ক্ষেতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। এছাড়াও দেশের পরিচিত ব্র্যান্ড ফ্রেশ, একমি এবং বিভিন্ন অনলাইন শপ। প্রতি কেজি সরিষা ফুলের মধু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

তিনি আরও জানান সঠিক পরিবেশ ও যত্ন পেলে রুপনগর এলাকাটি মধু উৎপাদনের জন্য অনেক সম্ভাবনাময়। সরকারি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো গেলে এ অঞ্চলে মধু উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, ধামরাই উপজেলা কৃষির জন্য খুবই বৈচিত্র্যময় ও সম্ভাবনাময়ী একটি এলাকা। বর্তমানে শীতের আমেজে ধামরাইয়ের মাঠে এখন সরিষার রাজত্ব।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বিজ্ঞানীরা সর্বশেষ যে সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছে তা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সেগুলোর ফলন ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষের প্রতি বেশি মনোনিবেশ করছে।

যার ফলে গত বছর ধামরাইয়ে ৭২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল যেটা এবছর ৭৫০০ হেক্টর জমিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

আর এই সরিষার ফুল থেকে উৎপাদিত মধু আহরণ করে অনেক মৌ-চাষিরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। গত বছর প্রায় ৫০ টনের মত মধু আহোরিত হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে গতবারের তুলনায় এবছর আরো বেশি মধু আহোরিত হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X