

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনে উগ্রবাদী ভারতীয়দের হামলার ঘটনায় ভারতের দেওয়া ব্যাখ্যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
একই সঙ্গে, বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সেখানে তিনি ভারতের প্রেস নোটের বক্তব্য সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় পক্ষ ঘটনাটিকে যেভাবে সহজ করে উপস্থাপন করেছে, বাস্তবতা ততটা সরল নয়।
তিনি জানান, বাংলাদেশের হাইকমিশন কূটনৈতিক এলাকার ভেতরে অবস্থিত এটি কোনো উন্মুক্ত বা সীমান্তবর্তী জায়গা নয়। সে কারণে ২০–২৫ জন কিংবা আরও বেশি লোকের একটি দল সেখানে পৌঁছানোই প্রশ্নবিদ্ধ।
তার ভাষায়, একটি সংরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় হিন্দু চরমপন্থি গোষ্ঠীর সদস্যরা কীভাবে ঢুকতে পারে, সেটাই বড় প্রশ্ন। এমন জায়গায় তাদের প্রবেশের সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। শুধু প্রতিবাদ জানিয়ে তারা চলে গেছে এমন দাবিও বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকির বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, সরাসরি প্রমাণ তার হাতে না থাকলেও এমন হুমকির কথা সরকার শুনেছে। তার প্রশ্ন, যদি কেউ সেখানে এসে হুমকি দেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, তবে সেটাই গুরুতর নিরাপত্তা ব্যর্থতার প্রমাণ।
তিনি আরও বলেন, হাইকমিশনের ভেতরে কেবল অফিস নয়, কূটনীতিকদের পরিবারও বসবাস করে। হামলার সময় সেখানে থাকা হাইকমিশনার ও তার পরিবার ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে পড়েন। অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ছিল ঘাটতি মাত্র দুজন নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত ছিলেন এবং তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের মৌলিক দায়িত্ব। এ ঘটনায় প্রচলিত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি বলেই সরকারের ধারণা।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে ভারতীয় পক্ষ যে আপত্তি তুলেছে, সেটিও নাকচ করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, দেশীয় সংবাদমাধ্যমে মোটামুটি সঠিক তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে, ভুল উপস্থাপনার অভিযোগ বাস্তবসম্মত নয়।
এদিকে, ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি নৃশংস অপরাধ হলেও একে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার প্রশ্নের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ঠিক নয়। নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক এবং ঘটনার পরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। তিনি যোগ করেন, এ ধরনের অপরাধ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও ঘটে, আর প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে দ্রুত ও সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া বাংলাদেশ সেটাই করছে।
ভারতের বিরুদ্ধে কী ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় দূতকে তলব করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবাদের ধরন প্রকাশ্যে আলোচনা না করাই ভালো।
তিনি জানান, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলাদেশ তার অবস্থান জানিয়ে যাচ্ছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপড়েন বাড়লে ভারতে বাংলাদেশের মিশন ছোট করার চিন্তা আছে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যদি সেদিকে যায়, তাহলে সেই সিদ্ধান্তও বিবেচনায় আসতে পারে। তবে আপাতত বাংলাদেশ আশা করছে, ভারত এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
মন্তব্য করুন

