

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে ভারতে পৌঁছে আজ মোদি-পুতিন বৈঠক করেছেন।
BBC-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই সফরের প্রধান লক্ষ্য জ্বালানি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ।
পুতিন দিল্লিতে পা রাখার আগেই রুশ পার্লামেন্ট দুই দেশের মধ্যে নতুন সামরিক লজিস্টিক সহায়তা চুক্তি অনুমোদন করেছে।
এই চুক্তি কার্যকর হলে এক দেশের সেনা অন্য দেশে গিয়ে বিমানঘাঁটি, বন্দর বা সামরিক স্থাপনা ব্যবহার করতে পারবে যা দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের মতো বড় বাজারে প্রভাব ধরে রাখা এবং প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার ভূমিকা শক্ত করার জন্যই এই পদক্ষেপ।
১.৪ বিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা, দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রীয় অবস্থান এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন ভারতের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে ভারত অনেক ক্ষেত্রে রাশিয়ার দিকে বেশি ঝুঁকছে বলে অনেকে মনে করছেন।
পুতিন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দুই দেশের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনেও অংশ নেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে নতুন সমঝোতা চুক্তি সই হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার তেল আমদানি কমাতে ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে ওয়াশিংটন রুশ–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগও অব্যাহত রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের দিল্লি সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
যুদ্ধ শুরুর আগে ভারতের মাত্র আড়াই শতাংশ তেল আমদানি ছিল রাশিয়া থেকে। নিষেধাজ্ঞা ও মূল্যছাড়ের সুযোগে সেই পরিমাণ বেড়ে একসময় ৩৫ শতাংশে পৌঁছায়। এতে ভারত অর্থনৈতিক সুবিধা পেলেও যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হয়।
গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, যুক্তি দেয়—রুশ তেলের অর্থ রাশিয়ার যুদ্ধতহবিলকে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে ভারতের রুশ তেল কেনা কিছুটা কমে আসে। এই সফরে পুতিন আবারও তেল রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোভিয়েত আমল থেকেই ভারত রুশ অস্ত্রের বড় ক্রেতা। এবারও ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে নতুন যুদ্ধবিমান, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির বিষয়ে আলোচনা হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ায় শ্রমশক্তির সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ভারতীয় দক্ষ কর্মীদের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে মস্কো।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় বিচ্ছিন্নতার চাপ বাড়লেও রাশিয়া চাইছে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে। পুতিনের এই সফর সেই কৌশলের অংশ যা চীন সফরে মোদি ও শি জিন পিংয়ের সঙ্গে তোলা সাম্প্রতিক ছবিতেও প্রতিফলিত হয়েছিল।
রুশ বিশ্লেষক আন্দ্রি কোলেসনিকভ মনে করেন ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া রাশিয়ার জন্য বড় ক্ষতি হলেও ভারত ও অন্যান্য এশীয় দেশের সঙ্গে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে নতুন পথ খোঁজা এখন মস্কোর কৌশলগত অগ্রাধিকার।
মন্তব্য করুন

