

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা তিব্বতের লুনজে বিমানঘাঁটিতে চীন গড়ে তুলেছে ৩৬টি নতুন বিমান বাংকার, প্রশাসনিক ভবন ও উন্নত অ্যাপ্রন এলাকা।
সীমান্তবর্তী এই ঘাঁটিটি ম্যাকমোহন লাইনের প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে এবং তাওয়াং শহর থেকে মাত্র ১০৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এই নতুন স্থাপনাগুলো চীনকে সীমান্তের খুব কাছ থেকে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন মোতায়েনের সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
ভারতের অরুণাচল ও আসামের বিমানঘাঁটিগুলো এখন সরাসরি এই হুমকির আওতায় পড়ছে।
ভারতের সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি. এস. ধানোয়া এনডিটিভিকে দেওয়া এক মন্তব্যে বলেন, “লুনজেতে এমন বাংকার নির্মাণ মানে হলো— ভবিষ্যতে সংঘাত দেখা দিলে চীনের বিমানবাহিনী এখান থেকেই সরাসরি অভিযান চালাতে পারবে।”
তার ধারণা, ঘাঁটির ভেতরে ইতিমধ্যে গোলাবারুদ ও জ্বালানির ভূগর্ভস্থ মজুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “ডোকলাম সংকটের সময় আমরা দেখেছিলাম— তিব্বতে চীনের বিমানবাহিনী মোতায়েন সক্ষমতায় পিছিয়ে ছিল।
এখন তারা সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠছে, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
ভারতের সাবেক উপপ্রধান এয়ার মার্শাল অনিল খোসলার মতে, চীনের এই ঘাঁটি উন্নয়ন স্পষ্টতই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ পরিকল্পনার অংশ।
তাঁর বিশ্লেষণ, “৩৬টি বাংকার তৈরি হলে বিমান ও সরঞ্জাম ছড়িয়ে রাখার সুযোগ বাড়বে, আঘাতের ঝুঁকি কমবে এবং টানা অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, এসব বাংকার ভারতীয় বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত থেকে ঘাঁটিগুলোকে সুরক্ষা দেবে, ফলে সংঘর্ষের শুরুতেই চীনা বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি কম হবে।
তিব্বতের টিংরি, লুনজে ও বুরং বিমানঘাঁটিগুলো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) থেকে মাত্র ৫০–১৫০ কিলোমিটার দূরে, যা সংঘর্ষের সময় দ্রুত মোতায়েনের সুযোগ দেয়।
এ কারণে ভারতের সিকিম, অরুণাচল, উত্তরাখণ্ড ও লাদাখ অঞ্চলে উদ্বেগ বাড়ছে।
চীনের সিএইচ–৪ ড্রোন ১৬ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম এবং তিব্বতের উঁচু মালভূমিতে এগুলো হামলা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে, ভারত ২০২৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের “স্কাই গার্ডিয়ান” ড্রোন যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যা নজরদারি ও আঘাতের সক্ষমতা বাড়াবে।
ভারতের আরেক সাবেক উপপ্রধান এয়ার মার্শাল এসপি ধারকর বলেন, “চীনের নতুন অবকাঠামো আমাদের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আগে উচ্চতার কারণে আমরা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম, কিন্তু এখন সেই পার্থক্য দ্রুত কমে আসছে।”
ভূ–গোয়েন্দা বিশ্লেষক ড্যামিয়েন সাইমন মন্তব্য করেছেন, তাওয়াং ফ্রন্টের বিপরীতে দ্রুত বাংকার নির্মাণ চীনের বিমান শক্তি বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও ভারত সীমান্তে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ঘাঁটি বজায় রেখেছে, তবু বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপ দুই দেশের সামরিক সক্ষমতার ব্যবধান কমানোর প্রচেষ্টারই প্রতিফলন।
মন্তব্য করুন

