

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


নারী ওয়ানডে ক্রিকেটে অবশেষে ইতিহাস রচনা করল ভারত। নাভি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হলো হারমানপ্রীত কৌরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল।
এর মধ্য দিয়ে ভারত যুক্ত হলো বিশ্বকাপজয়ী চতুর্থ দেশগুলোর তালিকায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের পর। একইসঙ্গে ২০০৫ ও ২০১৭ সালের ফাইনালে হারের আক্ষেপ ঘুচিয়ে নতুন গৌরবগাঁথা রচনা করল ভারতীয় নারীরা।
প্রথমবার ফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য শেষ পর্যন্ত নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সূচনা করেও ম্যাচটি হাতছাড়া করে প্রোটিয়া মেয়েরা।
২৯৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা একসময় লরা উলভার্টের সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ৪২তম ওভারে দীপ্তি শর্মার বলেই আমানজোত কৌরের এক চমকপ্রদ ক্যাচে আউট হন উলভার্ট (১০১)।
তার বিদায়ের পর থেকেই ভেঙে পড়ে প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইন। শেষ পর্যন্ত ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় মাঠ ছাড়ে তারা।
বল হাতে জাদুকরী পারফরম্যান্স দেখান স্পিনার দীপ্তি শর্মা ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। শেফালি ভার্মা পান ২ উইকেটের সাফল্য।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। নির্ধারিত ৫০ ওভারে তারা তোলে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের বিশাল সংগ্রহ।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্ট ভেজা আউটফিল্ডের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতকে চাপে ফেলার আশায় ফিল্ডিং নেন, কিন্তু শুরুতেই দু’জন ওপেনারই তার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন।
স্মৃতি মান্ধানা (৪৫) ও শেফালি ভার্মার (৮৭) উদ্বোধনী জুটি মাত্র ১৭.৩ ওভারে দলকে এনে দেয় ১০৪ রান। এরপর জেমিমাহ রদ্রিগেজ (২৪) ও অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর (২০) কিছুটা থিতু হলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।
শেষ দিকে দীপ্তি শর্মা (অপরাজিত ২৭) ও রিচা ঘোষ (২০) দলের ইনিংসকে গতি দেন। দু’জনের ব্যাটে শেষ ৩৫ বলে আসে ৪৭ রান, যা দলকে ২৯৮ রানে পৌঁছে দেয়।
ফাইনালের পর আনন্দে ভাসে পুরো ভারতীয় শিবির। দুই দশক ধরে স্বপ্ন দেখা এই ট্রফিটি এবার অবশেষে এল ভারতের ঘরে। হারমানপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে দলটি প্রমাণ করেছে- অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস আর টিমওয়ার্কই বড় সাফল্যের চাবিকাঠি।
রিচা ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রানের এক ঝড়ো ক্যামিও খেলে আউট হন। দীপ্তি শর্মা ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে শেষ বলে রান আউট হন। তার ব্যাটে ভর করেই ভারতের সংগ্রহ ২৯৮ পর্যন্ত পৌঁছায়। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আয়াবোঙ্গা খাকা ৯ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ২৯৮/৭ (মান্দানা ৪৫, শেফালি ৮৭, জেমিমা ২৪, হারমানপ্রিত ২০, দিপ্তি ৫৮, আমানজোত ১২, রিচা ৩৪, রাধা ৩* ক্যাপ ১০-১-৫৯-০, খাকা ৯-০-৫৮-৩, এমলাবা ১০-০-৪৭-১, ডি ক্লার্ক ৯-০-৫২-১, লিস ৫-০-৩৪-০, ট্রায়ন ৭-০-৪৬-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ (উলভার্ট ১০১, ব্রিটস ২৩, বশ ০, লিস ২৫, ক্যাপ ৪, সিনালো ১৬, ডার্কসেন ৩৫, ট্রায়ন ৯, ডি ক্লার্ক ১৮, খাকা ১, এমলাবা ০*; রেনুকা ৮-০-২৮-০, ক্রান্তি ৩-০-১৬-০, আমানজোত ৪-০-৩৪-০, দিপ্তি ৯.৩-০-৩৯-৫, চারানি ৯-০-৪৮-১, রাধা ৫-০-৪৫-০, শেফালি ৭-০-৩৬-২)
ফল: ভারত ৫২ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: শেফালি ভার্মা
প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট: দিপ্তি শার্মা
এই জয়ের মধ্য দিয়ে নারী ক্রিকেটে নতুন অধ্যায় সূচনা করল ভারত, আর দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েরা রেখে গেলো লড়াইয়ের সাহসিকতার দৃষ্টান্ত।
মন্তব্য করুন
