

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এটি জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রেই সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে—ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে। ইসলাম মানুষের জন্য এমন একটি পথনির্দেশনা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ নিশ্চিত করে।
শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য যা বৈধ তা ইসলাম স্বীকার করে এবং যা ক্ষতিকর তা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। এর মধ্যে মদ্যপান ও জুয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগুলো মানুষের জন্য ক্ষতি ও ধ্বংস ছাড়া কিছুই বয়ে আনে না। তাই আল্লাহ এই পাপ থেকে দূরে থাকার আদেশ দিয়েছেন।
জুয়া ও মদ: সামাজিক ও ব্যক্তিগত ক্ষতি
জুয়া একটি মারাত্মক সামাজিক অপরাধ। জুয়াড়ির জীবনসংসার কুরে কুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সম্পূর্ণ হারাম। মহানবীর (সা.) আগমনের আগে মক্কায় বিভিন্ন ধরনের জুয়া প্রচলিত ছিল, যেখানে মানুষ মদ্যপান ও জুয়ার মাধ্যমে মত্ত থাকত।
কোরআনে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু এবং শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। এগুলো থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কারণ মদ-জুয়া মানুষের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিমুখ রাখে।
কোরআন: "তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এ দুটিতে রয়েছে মহাপাপ।" (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৯)
হাদিস: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।" (বায়হাকি, মিশকাত)
কোরআন: "হে যারা ইমান এনেছ, নিশ্চয় মাদকদ্রব্য, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারণী তীর হলো অপবিত্র ও শয়তানি কার্যকলাপ। এগুলো থেকে একেবারে দূরে থাক; যেন তোমরা সফল হও।" (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৯০-৯১)
হাদিস: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না।" (দারেমী, মিশকাত)
অতীতের জুয়া ও সামাজিক প্রভাব
অজ্ঞতার যুগে শুধু ধন-সম্পদের জন্য জুয়া হতো না, বরং স্ত্রীদেরও জুয়ার অংশ হিসেবে ধরা হতো। আরবিতে প্রচলিত ভাগ্য নির্ধারণী জুয়া “কিসাম বিল আযলাম” নামে পরিচিত ছিল, যা হারাম। এতে উটের মূল্য পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারত।
বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি
আজকের সমাজে লটারি, হাউজি, বাজি, রিং নিক্ষেপ ইত্যাদির মাধ্যমে জুয়ার বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। এগুলো কখনও মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে না। বিশ্বময় মদ ও জুয়ার ব্যাপকতা মূলত শেষ যুগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়।
বোখারি শরিফে উল্লেখ রয়েছে—মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য, দলাদলি, মিথ্যা, দুর্নীতি, সুদ, মদ, জুয়া ও ব্যভিচারের বিস্তার হচ্ছে।
মদ্যপান ও জুয়া সমাজবিরোধী কাজ। আল্লাহ যেহেতু এগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তাই আমাদের উচিত সব সময় এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
মন্তব্য করুন
