

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় সংগঠক সারজিস আলম অভিযোগ করেছেন, জুলাই সনদ ঘিরে যে প্রত্যাশা ছিল, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেবল দায়সারাভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তার মতে, এতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় স্বার্থের চেয়ে সরকারের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজক ছিল টুনিরহাট জুনিয়র ফুটবল একাডেমি।
সারজিস আলম বলেন, সকালে আমাদের দলের আহ্বায়ক যে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেছেন, সেগুলো কেবল এনসিপির পক্ষ থেকে নয়—জাতীয় স্বার্থেই উত্থাপিত। কিন্তু সরকার যে মনোভাবে এগোচ্ছে, তাতে স্পষ্ট হয় তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব নয়, বরং আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবেই দেখছে।
তিনি আরোও বলেন, আমরা দেশত্যাগ বোঝাচ্ছি না, বরং চাই আইনি ভিত্তি এমনভাবে সুসংহত হোক যাতে পরবর্তী সরকার এসে জুলাই সনদের কার্যকারিতা অস্বীকার করতে না পারে। অথচ এখনও এসব দিক অনির্দিষ্ট থেকে গেছে।
সারজিস আলম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে অনেক ছাড় দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখছি, ঘোষণাপত্র কার্যকর হওয়ার বদলে এক ধরনের কাগুজে চুক্তিতে রূপ নিচ্ছে। যদি এর বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে যারা অতীতে আন্দোলন করেছেন, ভবিষ্যতে তাদেরই রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে দাঁড় করানো হতে পারে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের যথাযথ সম্মান না দেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “ওইদিন একটি জাতীয় উপলক্ষকে রাজনৈতিক দলের জমায়েতে রূপ দেওয়া হয়। শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ব্যানার আর মিছিলের চিত্র আমরা দেখেছি। ক্ষোভ ও বিক্ষোভ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু প্রশাসন যে মাত্রায় লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, এমনকি রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে—তা অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়।
সরকারের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলে এনসিপি নেতার বক্তব্য, “এই সংকট সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যেত। সরকার চাইলে শান্তিপূর্ণ বিকল্প পথ বেছে নিতে পারত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা মানুষকে আঘাত করেছে, দায়িত্ব তাদের কাঁধে নেবে কে?”
এনসিপি নেতা জানান, অনেক রাজনৈতিক দল এখনও সনদে স্বাক্ষর করেনি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “উপদেষ্টারা চেষ্টা করলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। সরকার একচেটিয়াভাবে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তাই অন্যান্য দল এখনো সাড়া দেয়নি।
তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচন পর্যন্ত সময় পার করে দেওয়া। তারা জনগণের নিরাপত্তা নয়, নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পথকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
টুনিরহাটে আয়োজিত এই ফুটবল টুর্নামেন্টে আরও উপস্থিত ছিলেন কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর যুব ও ক্রীড়া বিভাগের সভাপতি তোফায়েল প্রধান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, বোদা টু-স্টার ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল, টুনিরহাট ফুটবল একাদশের সভাপতি নুর ইসলাম নুরু এবং সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল্লাহ প্রধান জুয়েল।
সারজিস আলমের বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে যে, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মাঝে এখনও আস্থার সংকট রয়েছে। জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে বাস্তব ও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি।
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
 
 
                    