মঙ্গলবার
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টাকে রেফারির ভূমিকায় চায় ৮ দল

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের প্রতীক
expand
জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের প্রতীক

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজন নিয়ে উদ্ভূত মতপার্থক্য দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক আটটি রাজনৈতিক দল।

সেই আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারি’ হিসেবে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আট দলের যৌথ বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি।

তাহের বলেন, আমরা আগে যেই ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এখন একটি দল সেটির বিরোধিতা করছে। আশা করছি তারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে। জুলাই সনদ কার্যকর না হলে আগে কিংবা পরে গণভোট আয়োজনের কোনো বাস্তব ফল হবে না। বরং গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করাই উচিত। কারণ, নির্বাচনের দিনে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে মানুষের মনোযোগ সেদিকে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি ইতোমধ্যে দলগুলোর মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আজ উপদেষ্টা পরিষদও একই আহ্বান জানিয়েছে। আমরা চাই, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যেন এই উদ্যোগে সাড়া দেয়। যদি সবাই ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়, তাহলে সমাধানের পথ খুলে যাবে।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ যদি মনে করে তাদের ভূমিকা শেষ, তাহলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। তাই আমরা চাই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আগের মতো এখনো রেফারির দায়িত্বে থাকুন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৈঠক শেষে বলেন, গণভোট কখন হবে, বিষয়বস্তু কী হবে এবং জুলাই সনদের ভিন্নমত নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—এই বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের আলোকে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, পরিষদ মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যেই সরকারকে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রস্তাব দিতে পারে। তবে নতুন কোনো সংলাপ উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, তা পরিষদ এখনো স্পষ্ট করেনি।

একই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, দেশ এখন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু জনগণ যে জুলাই সনদের মাধ্যমে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখেছিল, সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই সনদের আইনি বৈধতা নিশ্চিত করতে চাই। অবিলম্বে এর বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন আইন (আরপিও) পরিবর্তনের যে আলোচনা চলছে, আমরা সেটি মেনে নেব না—আরপিও আগের মতোই রাখতে হবে।

মামুনুল হক জানান, এসব দাবিতে আগামী ৬ নভেম্বর সকাল ১১টায় গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দাবি পূরণ না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করারও ঘোষণা দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর), মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, নেজামে ইসলামের মুফতি হারুন ইজহার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এবং জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান।

সকালের বৈঠকে অংশ নেয় আটটি দল—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

আট দলের পাঁচ দফা দাবি: ১.জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি ও নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন। ২.জাতীয় সংসদে দ্বিকক্ষ পদ্ধতি বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি চালু। ৩.সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। ৪.পূর্ববর্তী সরকারের ‘জুলুম, হত্যা ও দুর্নীতির’ বিচার কার্যকর করা। ৫.জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।

সূত্র, যুগান্তর

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন