বৃহস্পতিবার
২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তারেক রহমান: যিনি মানুষের হৃদয়ের কথা বলেন

মোর্শেদ হাসান খান
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৫ এএম আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
তারেক রহমান
expand
তারেক রহমান

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের নাম নিঃসন্দেহে তারেক রহমান, যিনি দেশে না থেকেও আছেন।

পাশে না থেকেও যাঁর ছায়া ঘিরে আছে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশের আপামর মানুষকে, যার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত যশোরের ‘শুভ্র বালিকা’ আফিয়া। অস্বাভাবিক গায়ের রঙের কারণে যার বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছে।

বছর তিনেকের কন্যাশিশুকে নিয়ে মা মনিরা যখন অকূলপাথারে, তখনই তাদের পাশে দাঁড়ান মানবিক রাজনীতিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দায়িত্ব নেন শিশু ও তার মায়ের। কেবল দায়িত্বই নয়, শিশুটি সম্পর্কে তার বাবার ভ্রান্ত ধারণা যাতে নিরসন হয় সে বিষয়টিও দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় নেতাদের ওপর।

তারেক রহমানের এমন অভিভাবকত্ব কেবল আফিয়া আর তার মা মনিরাকেই নয়, আপ্লুত করেছে লাখো কোটি সাধারণ মানুষকেও।

২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন ও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানকে নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। দুর্নীতি আর লুটপাটের কথিত গালগল্প বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে তারা তারেক রহমানকে কোণঠাসা করে ফেলে।

কেননা তারা জানত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকার তারেক রহমানের মধ্যে যে মানবীয় রাজনৈতিক ধারা বহমান, তার চর্চা যত বেশি হবে, দেশের সাধারণ মানুষ তত বেশি বিএনপির প্রতি আকৃষ্ট হবে। সে কারণেই তারা জনগণ থেকে তারেক রহমানকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত করেছে।

তবে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। জনগণ আবিষ্কার করেছে একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে।

জনগণ চিনতে পেরেছে সত্যিকারের নেতাকে। সংকট কিংবা সম্ভাবনায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে তারা পেয়েছে তারেক রহমানকে, যিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ভাবেন দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে। কাজ করেন দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য।

তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান।

পারিবারিক পরিচয়ে তিনি ক্ষমতার বৃত্তে বেড়ে উঠলেও ক্ষমতা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করেনি, বরং তিনি মা-বাবার আদর্শে হয়ে উঠেছেন একজন দেশ ও মানবতাবাদী।

সে কারণেই তিনি দেশের কোটি কোটি মানুষের কাঙ্ক্ষিত আগামীর রাষ্ট্রনায়ক, যাঁর প্রতীক্ষায় বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে তার অমিত সম্ভাবনা নিয়ে।

১৯৮৯ সালে বগুড়া জেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নাম লেখান তারেক রহমান। এর পর থেকে শুরু হয় তাঁর রাজনীতিক হয়ে ওঠার লড়াই। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নয়, বরং তৃণমূলের মানুষের কাছে গিয়ে তাদের কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন রাজনীতি।

প্রান্তিক মানুষের সমস্যা-সংকট আর সম্ভাবনার চুলচেরা বিশ্লেষণ কিংবা উত্তরণের উপায় খুঁজতে খুঁজতে রাজনীতিকে নিজের কাছে সহজপাঠ্য করেছেন তিনি। তিনি ধারণ করেছেন কৃষকের স্বপ্ন, মুটে আর মজুরের সংগ্রাম কিংবা তারুণ্যের সম্ভাবনাময় আগামীকে।

তাইতো তাঁর রাষ্ট্র দর্শন কিংবা রাজনৈতিক বক্তব্য এতটা বাস্তবসম্মত হয়, যেন মানুষের হৃদয়ের কথা বলেন তিনি। যেন তিনি বলেন, আমি-তুমি আর আমরা যা বলতে চেয়েছি, অথবা ভেবেছি বলব বলে—সে সবকিছুই।

তারেক রহমান দলীয় তেমন কোনো পদপদবিতে না থাকলেও বহু আগে থেকেই তিনি ছাত্রদলের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেন।

তিনি নিজে রাজনীতি বুঝেছেন। যা ভেবেছেন কিংবা যেভাবে রাজনীতিকে দেখতে চেয়েছেন, তা নিয়ে কথা বলেছেন নেতাদের সঙ্গে। এভাবে খোলামেলা আলোচনায় উপকৃত হয়েছে দল। এগিয়েছে দেশ। রাজনীতিতে পরিপক্ব হয়েছেন তিনি।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের ভোট বিপ্লবের নেপথ্য কারিগর হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন তারেক রহমান। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলেও তারেক রহমান সরকারে যোগ না দিয়ে সাংগঠনিক কাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হন।

তাঁর নেতৃত্বে দলীয় কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পাদপ্রদীপে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং নির্বাহী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ও দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চেয়ারপারসন কার্যালয়ের সার্বিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তারেক রহমান।

রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক—এককথায় দেশ ও দল পরিচালনার এক আধুনিক গবেষণাগার হিসেবে পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু হয় চেয়ারপারসন কার্যালয়ে।

শিক্ষিত মেধাবী একদল আধুনিক কর্মী বাহিনী ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের বাস্তবধর্মী কর্মযজ্ঞ শুরু করেন কর্মবীর তারেক রহমান।

দক্ষ কর্মী বাহিনী দিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রকৃত সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করেন।

এরপর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করে দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সঠিক এবং কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এবং সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণকারী নেতাদের সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছে চেয়ারপারসন কার্যালয়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, সাহিত্য, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সামাজিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জসহ সামগ্রিক বিষয়ে গবেষণা করা এবং গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করার মধ্যে ছিল তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা।

তারেক রহমানের ভিশনারি রাজনীতির অন্যতম এক দৃষ্টান্ত হচ্ছে ‘তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন’।

২০০২ সালে তৃণমূল পর্যন্ত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রাণশক্তিতে রূপান্তরের এক মহাযজ্ঞ নিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রান্তিক এলাকাগুলো চষে বেড়ান। তারেক রহমানের এই অফুরান প্রাণশক্তি তাঁকে তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘তারুণ্যের অহংকার’ হিসেবে পরিচিত করে তোলে।

তিনি বিশ্বাস করেন, এ দেশের তরুণসমাজের কাছে দেশের সঠিক ইতিহাস, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাংলাদেশবাদী রাজনীতির বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হলে একদিন তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এক রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হবে।

এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সঙ্গে করে লাখো মানুষের তুমুল হর্ষধ্বনি আর অবিরাম ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে সবুজ বাংলার প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তারেক রহমান।

২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাস দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভা’ করে তিনি দলে নতুনভাবে আলোড়ন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।

কেননা তিনি মনে করেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীই দল ও দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে পারেন। সঠিক নির্দেশনা আর দক্ষ নেতৃত্ব তাঁদের ভেতর সুপ্ত নেতৃত্বকে জাগিয়ে তুলবে।

সে কারণেই তিনি তৃণমূলে ঘুরে ঘুরে তাঁদের উজ্জীবিত করেন। তাঁর এই অভিনব রাজনৈতিক ভাবনা ও তা বাস্তবায়নের প্রারম্ভিক কর্মসূচিগুলো ছিল নন্দিত, যথাযোগ্য ও সময়ের চেয়ে অগ্রসরমাণ।

রাজনীতিতে তারেক রহমানের এই কর্মসূচি ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। বিরোধী শিবিরেও তাঁকে নিয়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়।

রাজনীতির বাইরেও তারেক রহমানের সমাজ ও দেশ নিয়ে ভাবনার ইচ্ছা প্রবল।

তিনি চেয়েছেন কখনোই যেন দেশের মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন না হন। ক্ষমতায় না থেকেও যাতে সামাজিক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়া যায় সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’।

তাঁর হাতে গড়া অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি আজ দেশে মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কৃষি-শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বহু বছর ধরে এই ফাউন্ডেশন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আমল শেষ হয়েছে। তারুণ্যের প্রবল ঝড়ে উড়ে গেছে অহংকার আর দম্ভের রাজপ্রাসাদ। দেশে এখন বইছে গণতন্ত্রের হাওয়া।

রক্তস্নাত বিপ্লব আমাদের ধরে রাখতে হবে। এগিয়ে নিতে হবে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দূরদর্শিতা এবং খালেদা জিয়ার বাংলাদেশপন্থী রাজনীতিকে ছড়িয়ে দিতে হলে এই মুহূর্তে তারেক রহমানের বিকল্প নেই।

তাঁর নেতৃত্বেই সৃষ্টি হবে এক নতুন ইতিহাস। বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশ এখন তাঁরই অপেক্ষায়। শুভ জন্মদিন ভিশনারি লিডার তারেক রহমান। জন্মদিনে আপনার প্রতি অফুরন্ত শুভ কামনা।

লেখক : অধ্যাপক এবং গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন