

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে উচ্চ, মাঝারি এবং নিম্নঝুঁকি এলাকা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানচিত্রে দেখা যায়, দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশের বেশ কিছু জেলা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত।
জোন–১ বা সর্বোচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নয়টি জেলা। এর সঙ্গে রয়েছে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও নরসিংদীর অংশবিশেষ, সম্পূর্ণ কিশোরগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির কিছু এলাকা। এগুলো মূলত সক্রিয় ফল্ট লাইনের আশপাশ, তাই কম্পনের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।
অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালীকে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এলাকা হিসেবে জোন–৩-এ রাখা হয়েছে।
১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশে পাঁচটি বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল, যার অধিকাংশের উৎস ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার অঞ্চল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই এলাকাগুলো ভবিষ্যতেও বড় মাত্রার কম্পনের মুখে পড়তে পারে। ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় সিলেট-ময়মনসিংহ অঞ্চলকে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়।
ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের চারপাশে পাঁচটি ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল রয়েছে। এর মধ্যে একটি মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট বাউন্ডারি। আরেকটি নোয়াখালী থেকে সিলেটের দিকে, তৃতীয়টি সিলেট পেরিয়ে ভারতের ভেতরে গেছে। পাশাপাশি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকার ডাউকি ফল্ট ও মধুপুর ফল্টও গুরুত্বপূর্ণ ভূকম্পন উৎস।
রাজউকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন নিচু হওয়ায় তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে থাকলেও ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ভবন উচ্চঝুঁকির তালিকায়। বড় ভূকম্পন হলে এসব ভবনের ব্যাপক ক্ষতি এবং প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। তাই ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা সংস্কার করে ভূমিকম্প সহনশীল করা জরুরি।
ভূমিকম্প বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে। সাম্প্রতিক কম্পন সেই উদ্বেগকে আরও স্পষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, ঢাকার ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই যদি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে বড় মাত্রার কম্পন হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে এখনো অনেক ভবন বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে—যা বড় দুর্যোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন