

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ৫ তারকা মানের হোটেল লা মেরিডিয়ান। দেশের প্রধান এয়ারপোর্টের একদম নিকটবর্তী খিলক্ষেত এলাকায় নির্মিত এই হোটেলটির চাহিদা ছিল রুচিশীল ও সম্ভ্রান্ত শ্রেণির কাছে।
তবে বিভিন্ন সময়ে এই হোটেলটির মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। যার কারণে ইমেজ সংকটে পড়ে হোটেলটি। এতকিছুর মধ্যেও লা মেরিডিয়ানের রেস্টুরেন্টগুলোর সুনাম ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে রেস্টুরেন্টের গ্রাহকরা নিয়মিত বাজে রিভিউয়ের শিকার হচ্ছে হোটেলটি।
সম্প্রতি ব্রিটিশ ব্রাঞ্চ বাফে অফার করে লা মেরিডিয়ান কর্তৃপক্ষ। ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চের সমন্বয়ে এই ব্রাঞ্চের দাম ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ টাকা। এই অফারে একটি কিনলে ৩টি ফ্রি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় নির্দিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে।
এই ব্রাঞ্চ অফার উপভোগ করতে যান আরিফুল হাসান নামের একজন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। তিনি তার পরিবারসহ চলতি নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে হোটেল লা মেরিডিয়ানে যান। সেখানে তিনি ভয়াবহ বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন বলে ফেসবুকে পোস্টে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ ব্রাঞ্চ পুরোটাই একটা স্ক্যাম। ব্রিটিশ কোনো আইটেমই ছিল না। এমনকি ব্রিটিশ পতাকার পরিবর্তে রেস্টুরেন্টটিতে ছিল গ্রীসের পতাকা দিয়ে সাজানো।
খাবারের আইটেম সম্পর্কে তিনি বলেন, কয়েকটা মেনুতে নাম ছিল না। স্টাফরাও সাহায্য করেনি। দুই রকমের স্যুপ ছিল যা ভালো ছিল না। এপেটাইজার ছিল ফিশ চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও মিনি বার্গার। এগুলোর কোনোটিই ৫ তারকা মানের ছিল না।
গ্রিল আইটেম ছিল বেগুন, গাজর, বেবি কর্ন, বিফ স্টেক, রোস্টেড টার্কি সবই কাঁচা। ক্যালামারি, অক্টোপাস, চিংড়ি ফ্রাই খাওয়ার জন্য দুইটি সস গরম করছিল। সস দুটোর নাম লেখা ছিল না, এমনকি স্টাফরাও সসের নাম জানে না। এছাড়া গ্রিলড আইটেমগুলো আগেই কেটে রাখায় সব ঠান্ডা ছিল। পাস্তা আইটেম দুইটিই নষ্ট ছিল।
মেইন ডিস ছিল মাটন কাচ্চি, যা জঘন্য। মিক্সড ডাল খুব বাজে ছিল। বীফ কারি ভালো ছিল, চিকেন তন্দুরি, চিকেন কোরমা, রুই মাছ ছিল অ্যাভারেজ। তবে বিফ লাসানিয়া ভালো ছিল। বান আইটেম কেউ ব্যবহার করেনি।
সালাদ আইটেম ছিল সবচেয়ে জঘন্য। বড় বড় করে শসা, টমেটো কাটা ছিল, প্রায় সব সালাদ আইটেমে। গিলে খেতে কষ্ট হচ্ছিল। ফলের মধ্যে ছিল ড্রাগন, আনারস, মালটা। কোনো স্পেশাল ফল ছিল না, এত দামি বাফে ব্রাঞ্চে।
ডেজার্ট আইটেম ছিল আরও খারাপ। একই আইটেম কয়েক জায়গায় রাখা। কেকগুলো ছিল লো কোয়ালিটির। ডেজার্ট আইটেমগুলো বাজেভাবে সাজানো ছিল। নিতে কষ্ট হচ্ছিল, হাতে লাগছিল পাশের ডেজার্টের সাথে।
আইসক্রিমের মহিলা স্টাফ জানে না কোনটি কোন ফ্লেভারের, অনেক পুরানো আইসক্রিম। কোনো টেস্ট ছিল না, জাস্ট মনে হচ্ছিল বরফ খাচ্ছি।
পানীয় আইটেমে ছিল পেপসি, সেভেন আপ (বুদবুদ ছিল না, প্রায় পানি ছিল ২ লিটার বোতল থেকে রিফিল করে), পানি, ডিটক্স ওয়াটার।
চা, কফি ছিল। দুধ অনেক ঠান্ডা ছিল। চা-কফি নিলে সেটা ওখানেই ঠান্ডা হয়ে যায়। কোনো আইটেম একবার নেওয়ার পরে দ্বিতীয়বার নেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিল না।
তার এই পোস্টের নিচে অনেকেই তাদেরও বাজে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। একজন ভোক্তা বলেন, হোটেল লা মেরিডিয়ানের হ্যালোউইন ফেস্টে গিয়েছিলাম। অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ রকমের বাজে। ৯ হাজার টাকার বাফেতে ৯টি আইটেমও ভালো ছিল না।
জেদুর রহমান সুমন নামের একজন লিখেছেন, এইসব ৫ তারকা নামধারী হোটেলগুলোর খাবারের মান সবসময়ই বিলো স্ট্যান্ডার্ড লেগেছে বাইরের দেশের ৫ তারকার তুলনায়। এসব হোটেলে খাওয়া হলো টাকা নষ্ট।
সার্বিক বিষয় লা মেরিডিয়ানের জনসংযোগ বিভাগের সদস্য তাসলিম আদিতা এনপিবি নিউজকে বলেন, আমাদের ফেসবুক পোস্টটি নজরে এসেছে। আমরা সবসময় গ্রাহকের প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কোনো বিষয় নিয়ে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে আমাদের কাছে সরাসরি জানালেই আমরা তা সমাধান করি।
তিনি আরও বলেন, অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আমাদের ব্রিটিশ ব্রাঞ্চ নিয়ে গ্রাহকরা পজিটিভ রিভিউ দিচ্ছেন।
হোটেলের স্টাফদের আচরণ নিয়ে ওঠা প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোনো অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
মন্তব্য করুন