বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৩ নভেম্বর ঘিরে জনমনে আতঙ্ক

মাজহার ইমন
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫ পিএম
বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুনে আতঙ্ক
expand
বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুনে আতঙ্ক
  • বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন
  • অনলাইন-অফলাইনে তৎপর অপরাধীরা
  • অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা: ডিএমপি
  • নাশকতা অব্যাহত থাকলে আতঙ্কও বাড়বে: ড. তৌহিদুল হক

একটি বেসরকারি অফিসে কর্মরত রাজধানীর শনির আখড়ার বাসিন্দা আমান হোসেন। প্রতিদিনের মতো বুধবারও সকালে বাসা থেকে বেড়িয়েছেন অফিসের উদ্দেশ্যে, গন্তব্য পল্টন মোড়। সবসময় বাসে যাতায়াত করা এই যুবক অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই রওনা দিয়েছেন কর্মস্থলের দিকে। কারণ গত দুই দিনে তার যাতায়াত করা রুটে অন্তত ২টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আমানের মতো গণপরিবহনে যাতায়াত করা প্রতিটি যাত্রীর মধ্যেই আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে গত কয়েকদিনের নাশকতার ঘটনায়। কর্মস্থল বা যেকোনো প্রয়োজনে বাসা থেকে বেড়তেই আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে নগরবাসী। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও নিমজ্জিত আতঙ্কের সাগরে।

সম্প্রতি রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ আর গণপরিবহনে আগুনের সংবাদের সমন্বয়ই উৎপত্তির কারণ। ইতিমধ্যেই রাজধানীর বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় “নিরাপত্তাজনিত কারণ” দেখিয়ে ১২ ও ১৩ নভেম্বর ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত বা অনলাইনে নিচ্ছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট কিংবা নির্বাচন নিয়েই আলোচনার মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দুঃসংবাদ হয়ে সামনে এসেছে ‘লকডাউন’। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ঘোষিত এই কর্মসূচি ঘিরে রাজনৈতিক পাড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে নানা প্রশ্ন, তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

এদিকে গত কয়েক দিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ২০টিরও বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে এবং গত তিন দিনে যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে দশের অধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলার সঙ্গে গ্রেফতারও হয়েছে অনেকে। এছাড়া, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের গ্রেফতারও অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তথ্য বলছে, অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ঝটিকা মিছিলের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অংশগ্রহণের সঙ্গে জড়িত ৬ শতাধিকের বেশি নেতা–কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই রাজধানীর বাইরে থেকে আসা। অর্থের বিনিময়ে তাঁরা ঢাকায় এসে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করে আবার ঢাকার বাইরে চলে যায়। যারা ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে পুলিশ।

দেশে ও বিদেশে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফেসফুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানি দিচ্ছে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে। বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। অনেকক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্যও প্রচার করেও জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এই চক্র।

এছাড়া, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের ফেসবুক পেজ থেকেও সাধারণের মাঝে ভয় ছড়ানো হচ্ছে। এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক নেতাকর্মীরাও তৎপর হয়ে উঠেছে কর্মসূচিতে অবস্থান জানান দিতে। রাতের আঁধারে বা ভোরে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনের যতটুকু প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে, পুলিশ সেটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টায়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। নগরবাসী আমাদের পাশে থাকলে আমরা দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারবো।

ঢাকাবাসীই নাশকতা রুখে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘অতীতে যেসব স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে, সেসব দলের নাশকতা ঢাকাবাসীই মোকাবিলা করেছে। এবারও ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থা সম্মিলিতভাবে এটাকে রুখে দেবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

১৩ নভেম্বরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে অনেক কিছু করে ফেলবে এমন মনে করছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে রাজধানীতে হওয়া ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অবশ্যই ভয় জন্মেছে, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এরপরেও যদি ককটেল বিস্ফোরণ-আগুন দেয়াসহ নাশকতা হয়, তাহলে জনমনে ভয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।

অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতেই হবে জানিয়ে ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, নাগরিক হয়রানী হয়-এমন বিষয়গুলোর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে দায়িত্বশীল সংস্থার।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন