

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বিতর্ক। বিএনপি বলছে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করতে হবে—এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট, আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, সংসদ নির্বাচনের আগেই ভোট হওয়া উচিত, যদিও তারা সময় নির্দিষ্ট করেনি।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাত থেকেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ফেসবুক প্রোফাইল ভরে উঠেছে ‘না’ লেখা পোস্টারে। প্রায় সবাই একই ধরনের ফটোকার্ড শেয়ার করছেন এবং মন্তব্যে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছেন।
বেশ কিছু পোস্টের মন্তব্য থেকে ধারণা করা যাচ্ছে—বিএনপি গণভোট চায় না জাতীয় নির্বাচনের আগে। তাদের মতে, আগে নির্বাচন, পরে গণভোট হতে পারে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরও ‘না’ লেখা ফটোকার্ডটি শেয়ার করেছেন।
তাঁর পোস্টে ফারুক আহমেদ বিজয় নামে একজন লিখেছেন, “বাংলার মাটিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট হবে না—এই হবে আমাদের আন্দোলনের প্রতিজ্ঞা।”
অন্য এক ব্যবহারকারী আলিফ আশা মন্তব্য করেছেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট মানেই ষড়যন্ত্র, তাই দেশের স্বার্থে ‘না’ বলুন।”
বেশিরভাগ নেতাকর্মীর প্রতিক্রিয়ায় একই সুর—গণভোট নয়, আগে জাতীয় নির্বাচন।
এর আগে গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে বলা হয়, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ক্ষমতাবলে” জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ–২০২৫ জারি করা হবে।
কমিশনের ধারণা, এই আদেশের ওপর গণভোট হলে এবং তা অনুমোদন পেলে দ্বৈত ভূমিকার সংসদ গঠনের সুযোগ তৈরি হবে। সেই সংসদের সদস্যদের দিয়েই গঠিত হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ, যারা সংবিধানের কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষমতা পাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়ে বিএনপির কোনো সমঝোতা নেই, আলোচনা করারও প্রয়োজন দেখি না।” তিনি আরও জানান, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তাঁর মতে, তত্ত্বাবধায়ক ধাঁচের সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, গণভোটের সময় নির্ধারণ না করায় তারা সন্তুষ্ট নয়।
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে, এবং আদেশটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই জারি করা উচিত।”
এনসিপি কমিশনের প্রস্তাবকে মোটের ওপর ইতিবাচকভাবে দেখছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “‘হ্যাঁ–না’ ভোটের প্রস্তাব ও নোট অব ডিসেন্ট বাদ দেওয়া বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি।”
এনসিপি মনে করে, নির্বাচনের আগেই গণভোট হলে তা দলীয় প্রভাবমুক্তভাবে জনগণের মতামত প্রতিফলিত করতে পারবে।
সবশেষে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তিন ভাগে বিভক্ত—
বিএনপি: চায় একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট, জামায়াত: চায় নভেম্বরে গণভোট, এনসিপি: চায় নির্বাচনের আগেই গণভোট, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে।
মন্তব্য করুন
