

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যিনি একটি বই পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন—তার প্রচ্ছদ নিয়ে ভারতের সামাজিক ও সংবাদমাধ্যমে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দেশটির বহু সংবাদ এবং নেটিজেনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বলে রিপোর্ট করা হচ্ছে।
ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছে যে বইয়ের প্রচ্ছদে প্রদর্শিত গ্রাফিতি মানচিত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তভাবে দেখানো হয়েছে। এই মানচিত্রটিকে কিছু প্রতিবেদনে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ ধারণার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তা নিয়ে মতবিরোধ ও সমালোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব অভিযোগকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গ্রাফিতি সংকলনটি মূলত ২০২৩ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন প্রান্তে আঁকা ছাত্র-জনতার গ্রাফিতির নির্বাচিত চিত্রের সংকলন; এটিকে একটি ইতিহাসচিত্র হিসেবে জেনারেলকে উপহার দেওয়া হয়েছে এবং কোনো প্রকার ভূখণ্ডবিস্তারী অভিযোজন সেখানে নেই।
প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বইটির প্রচ্ছদে কলেজশিক্ষার্থী আবু সাইদের স্মরণে রক্তরঙা রূপরেখায় বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা আছে। গ্রাফিতি রূপকারিতার কারণে মানচিত্রের আকারে কিছু সৌন্দর্যগত পরিবর্তন বা বিকৃতি দেখা গেলেও, এটি ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে—এ ধরনের দাবি ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক।
সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হবার পর নানা ধরনের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বও উঠেছে। কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে, উপহারের ইঙ্গিত কূটনৈতিক ইস্যু ছাড়াও সামরিক সমন্বয়ের ইঙ্গিত বহন করতে পারে—যা বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে বলে ভারতের গোয়েন্দা মহলের কাহিনি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। প্রেস উইং এসব কাহিনি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিষয়টিকে অতিরিক্ত রাজনৈতিক ব্যাখ্যার ফল অভিযোগ করেছে।
প্রসঙ্গত, ‘দ্য আর্ট অফ ট্রায়াম্ফ: গ্রাফিতি অব বাংলাদেশ’ নামের সংকলনটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন দেয়ালে অঙ্কিত গ্রাফিতির ফটোগ্রাফ ও ইতিহাস তুলে ধরে। প্রকাশক হিসেবে বইটি প্রকাশ করেছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। প্রেস উইং জানিয়েছে, এর আগেও একই সংকলন বিশ্বনেতা ও বিদেশি অতিথিদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে—এমনকি জাতিসংঘ ও পশ্চিমা কয়েক দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদেরও উপহার দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি বলা হয়েছে, বইটি পাকিস্তানের জেনারেলকে উপহার দেওয়ার পর তা নিয়েই আন্দোলিত এবং অনিশ্চিত সংবাদ ও ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টা, কিংবা সরকারি অসংগঠনের নাম ব্যবহার করে যে দাবি উঠছে—সেগুলো যাচাই ছাড়া চালানো হচ্ছে বলে প্রেস উইং মনে করছে।
এদিকে, এই ঘটনার ফলাফল হিসেবে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কিছু ভারতীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করেছে; আবার অনেকে বিষয়টিকে গুজব ও অপপ্রচারের অংশ বলে আখ্যা দিয়েছে।
প্রেস উইং শেষ পর্যন্ত পুনরায় বলেছে—প্রকাশিত গ্রাফিতি ও মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষনে দেখা যায়, মূলত্বে বাংলাদেশের মানচিত্রই প্রতিফলিত রয়েছে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
মন্তব্য করুন
