

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ক্যাম্পাসে জুলাই অভ্যুত্থান বিরোধী ভূমিকা গ্রহন করে এবং গণহত্যার পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া ইবির (ইবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষকের পক্ষে মানববন্ধন করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাংশ। বহিষ্কৃত শিক্ষকেরা হলেন অধ্যাপক ড. শাহাজাহান মন্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল।
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরের সামনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদ্বয়কে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবিতে মানববন্ধন করেন।
এর আগে গত ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি তদন্তকমিটি গঠন করে। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় ড. শাহাজাহান মন্ডল ও ড. রেবা মন্ডলসহ মোট ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা—কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত শিক্ষক ড. শাহাজাহান মন্ডল সম্পর্কে বলা হয়, তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিবাদী শক্তির পক্ষে বিভিন্ন মিছিল ও মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের ৪ জুলাই আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘শাপলা ফোরাম’ আয়োজিত মিছিল-সমাবেশেও তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। সেখানে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে ‘আর নয় হেলা ফেলা, এবার হবে ফাইনাল খেলা’ ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়েছিল—এমন অভিযোগ রয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, আইন বিভাগ দীর্ঘদিন সেশনজটে ছিল; শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চেষ্টায় এখন সেটা অনেকটা কমেছে। তারা জানায়, ড. শাহাজাহান মন্ডল ও ড. রেবা মন্ডল শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং অনেকে ফর্ম ফিলাপসহ নানা বিষয়ে তাদের সহায়তা পেয়েছেন। “আমাদের বিভাগে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই—শাস্তিমূলক সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করা হোক,” দাবি করেন তারা।
এক শিক্ষার্থী হৃদয় বলেন, “তদন্ত কমিটি কতটুকু নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ক্যাম্পাসে এখনো অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাঁদের রাজনৈতিক মনোভাব আওয়ামীপন্থী; তাহলে কেনইবা এই সবাইকে একইভাবে দেখা হচ্ছে না?”
আরেক শিক্ষার্থী আছিয়া বলেন, “আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি আমাদের শিক্ষককে ফিরিয়ে আনার জন্য। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল—শিক্ষার মান উন্নয়ন। সেই কাজে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন এই দুই শিক্ষক।”
অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. শাহাজাহান মন্ডল বলেন, “আমি ৪ আগস্টের মিছিল পরবর্তী সভায় ছিলাম; মিছিলে ছিলাম না। মিছিল ও সভায় থাকাটা আলাদা কথা। আমি কোনোভাবে জুলাইবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ছিলাম না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা আরেকটি কমিটি গঠন করবো, যা কাকে কতটুকু শাস্তি দেয়া যায় তা বিবেচনা করবে। তবে ফ্যাসিস্ট কার্যকলাপ নিয়ে আমরা কোনো ছাড় দেব না।”
উল্লেখ্য, গণহত্যার পক্ষে পক্ষপাতিত্ব চিহ্নিত করার জন্য আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে তদন্তকমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও ও সংবাদপত্রের খবروںের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টতা মিললে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
