

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং বারডেম জেনারেল হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে ব্রেস্ট ক্যান্সার বিষয়ক দিনব্যাপী এক গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ স্বাস্থ্য ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) 'Save The Smile: Breast Cancer Awareness Program' শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, তাদের মা-বোন, শিক্ষক ও স্টাফদের জন্য বারডেম জেনারেল হাসপাতালে বিশেষ স্বাস্থ্য ছাড় নিশ্চিত করা।
এই বিশেষ উদ্যোগের আওতায় বারডেম জেনারেল হাসপাতাল প্রাইমারি ব্রেস্ট স্ক্রিনিং সম্পূর্ণ ফ্রি ঘোষণা করেছে। এছাড়াও ব্রেস্ট আল্ট্রাসনোগ্রাফি ১৫০০ টাকার পরিবর্তে ১০০০ টাকায় এবং ব্রেস্ট মেমোগ্রাম ২৫০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০০ টাকায় করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ ছাড় সুবিধা আগামী ১০ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্টাফদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। তিনি সমাজের সর্বত্র স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, লজ্জা, ভয় কিংবা সঙ্কোচের কারণে নারীরা অনেকসময় স্বাস্থ্যগত সমস্যা গোপন করেন, যা সমস্যাকে জটিল করে তোলে।
তিনি জানান, খাদ্যাভাস, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হলে এ ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি তিনি তুরস্কের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে জানিয়ে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নের আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন মোনামী, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মির্জা মাহবুব হাসান, বারডেম অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোর্শেদ উদ্দীন আকন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের মূল আলোচনায় বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর শর্মিষ্ঠা রায়, সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসুদা জয়া এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসিনা আলম ব্রেস্ট ক্যান্সারের সামাজিক ট্যাবু, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের পদ্ধতি, করণীয় এবং দেশীয় পর্যায়ে চিকিৎসা সুবিধার অগ্রগতি নিয়ে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা রাখেন। সেমিনারে বক্তারা জানান, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৬ হাজার ৮শ জন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে মারা যান, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে সেটি নিরাময় করা সম্ভব।
ডাকসুর সহসভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা একটি মাইলফলক স্থাপন করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি প্রথম উন্মুক্ত ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। যেমন জুলাই বিপ্লব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, ঠিক তেমনি ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতার এই বার্তাও সমাজজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আমরা আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই। শিক্ষার্থীরা যেন যেকোনো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যায় ডাকসুকে পরিবারের মতো পাশে পায় সেটিই আমাদের লক্ষ্য।
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস. এম. ফরহাদ বলেন, আজকের তাৎপর্যপূর্ণ আয়োজন ও বিশেষ ডিসকাউন্ট উদ্যোগের জন্য বারডেম কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ১৮টি হলে ফার্স্ট এইড ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি ছাড়পোকা নিধনের কাজও চলছে। মেয়েদের দুইটি হলের রিডিং রুমে এসি স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো ডাকসুর দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় অনেক হল সংসদ কাজ শুরু করতে হিমশিম খাচ্ছে। বহিরাগত ও মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।
ডাকসুর স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে আজকের প্রোগ্রামটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ও অংশগ্রহণই আমাদের আগামীর অনুপ্রেরণা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ডাকসু’র স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া। এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের টিশার্ট, নোটপ্যাড, চাবির রিং, লাঞ্চ সুভেনির প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সম্মানিত অতিথিদের হাতে স্মারক সুভেনির তুলে দেওয়ার মাধ্যমে প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
মন্তব্য করুন