

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাসায় মালাইলা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যা করে গৃহকর্মী আয়েশা (২৩)। ঘটনার পর বাথরুমে গিয়ে গোসল করে নাফিসার ইউনিফর্ম পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় গৃহকর্মী আয়েশা।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালের দিকে শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ বাসার সপ্তম তলার ৭/বি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, ঐ বাসার দারোয়ান মালেকের মাধ্যমে মাত্র চার দিন আগে ওই মেয়েকে আনা হয়। পরে তার মাধ্যমে নিহতের বাসায় কাজ নেয় গৃহকর্মী। নিজের নাম আয়েশা বলে পরিচয় দেয়।
ভবনের বাসিন্দারা জানান, নিহত মালাইলা আফরোজ (৪৮) গৃহিণী। মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবিমস স্কুলের ফিজিক্সের শিক্ষক।
ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার কয়েকটি দৃশ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সকাল ৭টার দিকে নাফিসার বাবা তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বাসা থেকে বের হন। এর কিছুক্ষণ পর, ৭টা ৫১ মিনিটে গৃহকর্মী আয়েশাকে বোরখা পরে লিফটে উঠে সাততলায় যেতে দেখা যায়। পরে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের ফুটেজে দেখা যায়—স্কুলব্যাগ কাঁধে, স্কুলের পোশাক পরে এবং মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে আয়েশা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাফিসার বাবা বাসায় ফিরে এসে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
নিহত নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাসায় একজন কাজের মহিলা দরকার ছিল। বোরকা পরিহিত মেয়েটি আমাদের বাসার দারোয়ান খালেকের কাছে কাজের সন্ধান করলে সে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমার স্ত্রী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়।
পরে আমি স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটা কাজ শুরুর পর প্রথম দুদিন সময়মতো এসেছে। গতকাল সে সাড়ে ৯টার দিকে আসে। আজ কী হয়েছে, এটা তো আর বলার অবস্থায় নেই।
এদিকে ভবনের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ। বাসার আলমারিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তছনছ করা।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, মাকে হত্যার পর ওই মেয়েটি দৌড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় হয়তো ইন্টারকমে সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে ইন্টারকমের লাইনটি খোলা পাওয়া যায়। মেয়েটি খুব সুন্দরভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে বাথরুমে গিয়ে গোসল করে নিজের শরীরের সমস্ত রক্ত পরিষ্কার করে নাফিসার স্কুলের ড্রেস পরে নির্দ্বিধায় গেট দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে তল্লাশি করে বাথরুমে গিয়ে একটি সুইচ গিয়ার ও আরও একটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা ও মেয়েকে হত্যা করেছে গৃহকর্মী আয়েশা। এই ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান জানান, পুলিশ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পায়। মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, নেওয়ার পর সে-ও মারা গেছে। পরে লাশ দুটি সুরতহালের পর ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
পুলিশের মতে, বাসার ভেতরে সংঘর্ষের চিহ্ন স্পষ্ট—মেঝে ও দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে বাসা থেকে কিছু জিনিসপত্র নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। সিসিটিভি ফুটেজে আপাতত একমাত্র একজনকেই দেখা গেছে; তবে আশপাশে অন্য কেউ ছিল কি না, তা আরও বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনাস্থল থেকে দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বাথরুমে ধোয়া-মোছার চিহ্ন পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারী সেখানে গিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করে নেয়।
মন্তব্য করুন

