

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারানোর ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। চলতি বছরে রাজধানীসহ সারাদেশে ছিনতাইয়ের সময় খুন হয়েছেন ১০ জনেরও বেশি মানুষ। ধারাবাহিকভাবে ঘটছে ছুরিকাঘাত, হাতুড়িপেটা, গুলিসহ সব ধরনের নৃশংসতা।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন ২০ বছরের কাউছার। ১৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখানে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের হাতুড়িপেটায় প্রাণ হারান সুমন কুমার পাল। পল্লবীতে সিএনজি ছিনতাইয়ের সময় চালককে হাতুড়ি দিয়ে হত্যা করা হয়।
গত ১৬ মে পল্লবীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় ওই চালক আবদুল অজিদ ওরফে বাচ্চুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৯ জুলাই ফ্লাইওভার থেকে টঙ্গী নামার সময় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মারা যান বরিশাল সরকারি হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান। ৭ আগস্ট সিলেট কোতোয়ালি থানার কয়েকশ গজ দূরে কিনব্রিজ এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত হন ডালিম নামের এক যুবক। ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন স্কুল শিক্ষার্থী মো. জিহাদ। একই ধরনের ঘটনায় প্রাণ হারান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আকরাম হোসেনও।
গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে যাত্রী সেজে রিকশায় ওঠা ছিনতাইকারীরা দেড় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং রিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে আকরাম বাধা দেন। এসময় তার ঘাড়ের ডান পাশে ও পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। চিৎকার শুনে লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেদিনই সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বেঁচে গেছেন কেউ কেউ। রাজধানীর বাসিন্দা নাফিস আজিজ সিদ্দিকি তাঁদের একজন। সহকর্মীর বাবার জানাজা শেষে ফিরে আসার পথে যাত্রাবাড়ীর তিতাস রোডে তিন ছিনতাইকারী তার মোটরসাইকেল থামায়। ফোন ছিনিয়ে নিতে চাইলে বাধা দেন নাফিস; সঙ্গে সঙ্গে তার বাম পায়ে গুলি করা হয়। মোটরসাইকেল ও ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করেন।
একসময় নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ছিনতাই আতঙ্ক হলেও, কিন্তু এখন মোহাম্মদপুর-যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে মিরপুর, উত্তরা, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নানা এলাকায় রাত-ভোরে ঘটছে এসব ঘটনা। অস্ত্র ঠেকিয়ে, গুলি করে কিংবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এতে নগরবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র নিরাপত্তাহীনতা।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে চুরির মামলা হয়েছে ১,৬৬৩টি, যার মধ্যে ডিএমপিতে ৪০০টি। গত বছর সারাদেশে মামলা হয়েছিল ১,৪১২টি এবং ডিএমপিতে ২৪৮টি। ২০২৩ সালে ডিএমপিতে ছিল ১৯৯টি আর সারাদেশে ১,২২৭টি। প্রতিবছরই বাড়ছে মামলার সংখ্যা-অর্থাৎ বাড়ছে চুরি-ছিনতাই। ঘটনাক্রমে মৃত্যু হলে এসব মামলা রূপান্তর হয় খুনের মামলায়।
এদিকে খুনের মামলার সংখ্যাও উদ্বেগজনক। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে খুনের মামলা হয়েছে ৩,২৩০টি; ডিএমপিতে ৩৭১টি। গত বছর সারাদেশে খুনের মামলা ছিল ৩,৪৩২টি, ডিএমপিতে ৩৩৯টি। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা সারাদেশে ছিল ৩,০২৩টি এবং ডিএমপিতে ১৬৫টি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফখরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, অফিস শেষ করে রাত-বিরেতে বাসায় ফিরতে হয়। এ বছরই রাজধানীর কাজলায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে মোবাইল হারিয়েছি। ছুরি ঠেকিয়ে সব নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এদের (ছিনতাইকারী) কথা মতো সব না দিলে হয়তো আমাকেও ছুরি দিয়ে আঘাত করত।
ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি'র গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, নিয়মিত টহল ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতেও বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশের এই দাবির সঙ্গে একমত নন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক। তাঁর মতে, পুলিশের টহল ও অভিযানের বাস্তবচিত্র দুর্বল।
তিনি বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের যে ভূমিকা প্রয়োজন, তা এখনও পূর্ণভাবে কার্যকর হচ্ছে না। অনেক অপরাধী গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে জামিন নিয়ে আবারও একই অপরাধ করছে।
মন্তব্য করুন
