রবিবার
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারি 

সাইফুল্লাহ আমান
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংক
expand
বাংলাদেশ ব্যাংক

আসন্ন বহুল প্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আর্থিক যোগ্যতা নিশ্চিত করতে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ-সংক্রান্ত তথ্য দ্রুত হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) বিভাগ। আগের মত ঋণ খেলাপিরা যেন সামনের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সবগুলো ব্যাংকের সিআইবি কর্মকর্তাদের এরকম একটি নির্দেশনা দিয়েছে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সঠিক তথ্য দিতে হবে। যে কোনো ধরণের চাপ থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। কোনোভাবেই কোনো অন্যায় সুবিধা কিংবা প্রলোভনে ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না বলেও সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া এবার হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়েও নির্দেশনা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, কোনও ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেলেও তার ঋণের প্রকৃত অবস্থার তথ্য সিআইবিতে অপরিবর্তিতভাবে রিপোর্ট করতে হবে। তথ্য গোপন বা ‘ইচ্ছামতো’ সুবিধা দেওয়ার কোনও সুযোগ থাকবে না। এরপরও যদি কোনো ব্যাংক এরকম অন্যায় করে থাকে তবে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিআইবি কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠকে নির্বাচনের আগে ঋণের তথ্য হালনাগাদ সম্পন্ন করার এবং কোনও ঋণখেলাপিকে যেন প্রার্থী হতে না দেওয়া হয়- এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিআইবি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনপিবি নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে কোনও ঋণখেলাপিকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেবে না সরকার। এর পাশাপাশি কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধ সুযোগ পেয়ে কোনো ঋণ খেলাপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।’

করোনার পর থেকেই ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১ শতাংশ থেকে শুরু করে ৪ শতাংশ পর্যন্ত ডাউনপেমেন্ট দিয়ে যে কেউ ঋণ খেলাপির দায় থেকে বাঁচতে পারতেন। এখনো সেই নিয়ম রয়েছে।

তবে দীর্ঘদিন খেলাপি থাকা ঋণগ্রহীতারা নির্বাচনের আগে পুনঃতফসিলের চেষ্টা করলে নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনও ধরনের ছাড়, বিশেষ সুবিধা বা নিয়মভঙ্গ করে পুনঃতফসিলের সুযোগ থাকবে না।

২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআইবি ডাটা আপডেট করতে ব্যাংকগুলোকে সুযোগ দেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল গ্রাহকরা যেন তাৎক্ষণিক সুবিধা পায়। কিন্তু দেখা গেছে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক সিআইবি আপডেট করে না।

এসব প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে এবং এখনও খেলাপি তথ্য সিআইবিতে জমা দেয়নি যারা, তাদের দ্রুত রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। মাস শেষে ঋণের স্থিতির ওপর ভিত্তি করে নতুন ও চলমান ঋণের সম্পূর্ণ হালনাগাদ তথ্য প্রতিবেদন আকারে পাঠাতে হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষভাবে যেসব তথ্য হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে, চলমান ও পরিশোধিত ঋণের হিসাব, সঠিক ঋণস্থিতি ও শ্রেণিমান, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, ওভারডিউ স্থিতি, খেলাপি কিস্তির সংখ্যা ও পরিমাণ, কিস্তি জমা বা আদায়ের তথ্য। এসব কিছু হালনাগাদ করতে হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসাইন খান এনপিবিকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচন নিয়ে সরকার খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশ ব্যাংককেও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এবারের নির্বাচনে যেন কোনো ঋণ খেলাপি আইনের ফাঁক গলে নির্বাচন করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঋণ-সম্পর্কিত তথ্য যাচাইয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিটি শাখায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে।

নির্বাচনি আইনে বলা আছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে পর্যন্ত কোনও প্রার্থীর ব্যাংক ঋণ ‘রেগুলার’ না থাকলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কঠোর উদ্যোগ নির্বাচনের আগে ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন