বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২৪ ঘণ্টা অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং, নতুন যুগের সূচনা

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭ এএম আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
expand
২৪ ঘণ্টা অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং, নতুন যুগের সূচনা

বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতকে পুরোপুরি ডিজিটাল মাধ্যমে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে অ্যাপভিত্তিক ব্যাংক চালুর কাজ শুরু হয়েছে। দেশে নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংকগুলোতে শাখা, এটিএম বুথ বা অবকাঠামো থাকবে না; গ্রাহকরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা যেকোনো সময় ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন।

বর্তমানে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান এই নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুমোদনের আবেদন করেছে। আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক-আকিজ এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২ নভেম্বর।

২০২৩ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার মূলধন থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন অনুসারে পরিচালিত হতে হবে এবং নগদ জমা অনুপাত (CRR) ও বিধিবদ্ধ জমা অনুপাত (SLR) বজায় রাখতে হবে।

ডিজিটাল ব্যাংকগুলো বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না, না কোনো ধরনের এলসি (Letter of Credit) খুলতে পারবে। তারা কেবল ক্ষুদ্রঋণ, খুচরা লেনদেন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের সুযোগ রাখবে। অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইপিও আনার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যা উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হবে।

গ্রাহক সুবিধা ও সেবা প্রস্তাবিত ব্যাংকগুলো সম্পূর্ণ অ্যাপভিত্তিক হবে। গ্রাহকরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে সব ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। শারীরিক কার্ডের পরিবর্তে সব লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে হবে। এছাড়া গ্রাহকরা অন্যান্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। সব লেনদেন পরিচালিত হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪ অনুযায়ী, যা নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা ও নেতৃত্ব ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যকে অনুমোদিত করা হবে না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে অন্তত ১৫ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদের ৫০ শতাংশ সদস্যকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মূল লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী সেবা পৌঁছে দেওয়া। এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পরবর্তী ধাপ প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর টেকনিক্যাল ও বিজনেস কমিটি যাচাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ প্রদান করবে। চূড়ান্ত লাইসেন্সের অনুমোদনের পর নতুন বছরের শুরুতে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রথাগত ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা হালনাগাদ রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক সময়ের দাবি। তবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষ জনবল পাওয়া, তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে রাখা এবং জনসচেতনতা ও বিপণন কৌশল নিশ্চিত করা।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন