বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াতের রহস্যময় ৩টি আসন, কারা পাবেন মনোনয়ন

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি
expand
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল অঞ্চলের পাঁচটি আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এর মধ্যে তিনটি আসনে জামায়াত প্রার্থীকে দেখা যেতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন চলছে। এই তিনটি আসনের দুটি পুরোপুরি ফাঁকা রেখেছে বিএনপি, আর একটি আসনে দেওয়া হয়েছে তুলনামূলক দুর্বল প্রার্থী। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, একসময়কার মিত্র জামায়াতকে কাছে টানার কৌশলের অংশ হতে পারে এই সিদ্ধান্ত।

জামায়াতের তিন আসনে জটিলতা পিরোজপুর-২, পিরোজপুর-১ এবং পটুয়াখালী-২ আসনকে ঘিরেই মূলত এই আলোচনার জন্ম। পিরোজপুর-২ আসনে জামায়াত নেতা মরহুম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামিম সাঈদীর বিপরীতে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুমন মঞ্জুরকে। তার পিতা মরহুম নুরুল ইসলাম মঞ্জুর অতীতে বিএনপি থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ছিলেন, তবে কখনো জয় পাননি। ফলে অনেকে মনে করছেন, আসনটি জামায়াতের জন্য ‘সহজপথ’ তৈরি করছে বিএনপি।

পিরোজপুর-১ আসনেও পরিস্থিতি একই রকম। এখানে জামায়াতের প্রার্থী সাঈদীর আরেক ছেলে মাসুদ সাঈদী। আলোচনা চলছে, জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির (জাফর) নেতা মোস্তফা জামাল হায়দারকেও আসনটি দেওয়া হতে পারে, তবে তার সংগঠন তেমন সক্রিয় না থাকায় বাস্তবে সুবিধা পেতে পারে জামায়াত।

অন্যদিকে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে জামায়াতের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় স্থানীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নুর–ফুয়াদের আসন ফাঁকা বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এবং পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে। ধারণা করা হচ্ছে, এই দুই আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে।

তবে স্থানীয় বিএনপি নেতারা এ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। বরিশাল-৩ আসনে মনোনয়ন চাইছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন ও স্থানীয় নেতা সাত্তার খান। সাত্তার খানের জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবের কারণে দলটির অভ্যন্তরে সমন্বয় না হলে আসনটি ঝুঁকিতে পড়বে বলে শঙ্কা করছেন অনেকেই।

অন্যদিকে, পটুয়াখালী-৩ আসনে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন গোছানো বিএনপি নেতা হাসান মামুনের নাম আলোচনায় থাকলেও মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জেলা বিএনপি সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, “আমাদের নিশ্চিত আসন কেন অন্য কাউকে দেওয়া হবে? এ সিদ্ধান্তে আমরা একমত নই।”

ঘোষণাহীন আসন ও অভ্যন্তরীণ সমীকরণ বিএনপি এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের মধ্যে ১৬টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বাদ পড়েছেন দলটির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা—মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাজিমউদ্দিন আলম এবং মেসবাহ উদ্দিন ফরহাদ। নতুন মুখ হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান এবং মরহুম নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে সুমন মঞ্জুর।

অন্যদিকে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনেও এখনো প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। আলোচনায় রয়েছেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার।

বিএনপির দলীয় নেতারা বলছেন, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা সেটাই মেনে নেব। প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে দলীয় ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি আপাতত নির্বাচনী কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইছে—একদিকে জোট ও সমমনা দলগুলোকে সন্তুষ্ট রাখা, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা। সেই ভারসাম্যের চেষ্টার মধ্যেই এখন আলোচনায় বরিশাল অঞ্চলের এই পাঁচ আসন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন