শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি খাতে পুঁজির চাহিদা প্রায় শূন্য

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
expand
বেসরকারি খাতে পুঁজির চাহিদা প্রায় শূন্য

দেশে নতুন বিনিয়োগ কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। শিল্প ও ব্যবসা খাতে নতুন উদ্যোগ বা সম্প্রসারণের তেমন কোনো খবর নেই।

সরকারি উন্নয়ন ব্যয়ও সীমিত রুটিন প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ঋণ বিতরণ এবং পুঁজিবাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস (জুলাই) শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকায়। আগের মাস জুনে এই অঙ্ক ছিল ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক মাসে ঋণের স্থিতি কমেছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। ফলে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হওয়ার বদলে ঋণাত্মক হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল মাত্র ৬.৫ শতাংশ, যেখানে লক্ষ্য ছিল ৯.৮ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক লক্ষ্য কমিয়ে ৭.২ শতাংশে নামালেও জুলাই শেষে তা অর্জিত হয়নি।

সরকারের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) তাদের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে বলেছে, ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহ, উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকগুলোর সতর্ক নীতি— সব মিলিয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি ঐতিহাসিকভাবে নিম্নমুখী হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উন্নয়ন ব্যয়ও সন্তোষজনক নয়। নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২.৩৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২.৫৭ শতাংশ। পাশাপাশি রাজস্ব খাতেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগস্টে রাজস্ব আয় ছিল ২৭ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।

সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে প্রায় ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এলেও ব্যাংকগুলো সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড থেকে ভালো মুনাফা করেছে।

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, উচ্চ সুদ, ভ্যাট-ট্যাক্স ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে নতুন ব্যবসা শুরু করা বা সম্প্রসারণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরীর ভাষায়— “এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন প্রকল্পের কথা কেউ ভাবছে না।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের মতে, বেশির ভাগ ব্যাংক এখন নতুন ঋণ না দিয়ে সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগকে নিরাপদ মনে করছে। তিনি আরও বলেন, “গত দেড় দশকে যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, তার অনেকটাই ছিল অনিয়মের ফল। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক অক্ষম হয়ে পড়েছে। তাই প্রবৃদ্ধি না হওয়াটা স্বাভাবিক।”

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থাও একই। গত ছয় মাসে প্রধান চার সরকারি ব্যাংকের ঋণ স্থিতি ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা কমেছে। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী স্বীকার করেছেন, নতুন বিনিয়োগ না থাকায় ঋণ বিতরণও কমছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০ হলেও, উৎপাদন খাতের নতুন বিনিয়োগের খবর নেই বললেই চলে। গত এক বছরে মাত্র ১২টি কোম্পানি সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে, যার পরিমাণ ২ হাজার ১১৩ কোটি টাকার কিছু বেশি।

একই সঙ্গে গত দেড় বছর ধরে কোনো নতুন কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আসেনি। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, এ দীর্ঘ সময় ধরে আইপিও না আসার নজির এর আগে নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংগঠন বিএপিএলসি সম্প্রতি যৌথ বৈঠকে বাজার সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান রূপালি হক চৌধুরী বলেন, “পুঁজিবাজারকে বড় করার জন্য সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। নতুন আইডিয়া ও ব্যবসা পরিকল্পনার মাধ্যমে ছোট কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে পারলে পরিস্থিতি পাল্টাবে।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন