রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জিইডির বিশ্লেষণ: সুদের চাপ ও ঋণ সংকোচনে অর্থনীতি থমকে যাওয়ার ঝুঁকি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪০ এএম
গ্রাফিক্স : এনপিবি
expand
গ্রাফিক্স : এনপিবি

দেশের ব্যাংকিং খাত এখন উচ্চ সুদহার এবং কম ঋণপ্রবাহ-এই দুই চাপে সংকটের মুখে।

এর ফলে বিনিয়োগের গতি কমে গিয়ে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াতেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) তাদের নভেম্বর সংখ্যার ইকোনমিক আপডেটে এমন চিত্র তুলে ধরেছে।

সোমবার একনেক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সামনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬.২৯ শতাংশে, যা আগের মাসের ৬.৩৫ শতাংশ থেকেও কম। গত চার বছরের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন অবস্থান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্য ৭.২ শতাংশ হওয়ায় বর্তমান প্রবাহকে অর্থনীতিবিদরা সরাসরি বিনিয়োগের ‘স্থবির অঞ্চল’ হিসেবে দেখছেন।

অন্যদিকে উচ্চ সুদের হার ব্যাংকিং খাতে কাঠামোগত বাধায় পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসের তথ্য বলছে-বিদেশি ব্যাংকগুলোর সুদ–স্প্রেড সর্বোচ্চ, আগস্টে ৯.২২ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ৮.৯৮ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের স্প্রেড কিছুটা কমলেও তা এখনও উচ্চ পর্যায়েই রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর স্প্রেডও দীর্ঘ সময় ধরে ৫.৫৫ থেকে ৫.৬৮ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ ধরনের উচ্চ স্প্রেডের পেছনে রয়েছে বাড়তে থাকা অনাদায়ী ঋণ, পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজারে পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতা না থাকা।

ফলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন এবং বহু প্রতিষ্ঠানই উৎপাদন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত করছে।

ব্যাংকগুলোর আচরণেও এসেছে বদল। খেলাপি ঋণের ঝুঁকিতে অনেক ব্যাংক এখন নিরাপদ সরকারি ঋণখাতে অর্থ দেওয়ায় বেশি আগ্রহী।

এর প্রভাবে সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৪.৪৫ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের জন্য অর্থায়নের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, এটি ‘ক্রাউডিং আউট ইফেক্ট’।

ঋণ সংকোচন ও উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন যন্ত্রপাতি আমদানিও কমিয়ে দিয়েছেন।

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে- জুলাইয়ে ৪৫৫.৯৩ মিলিয়ন ডলার নামতে নামতে হয়েছে ২৬৭.১ মিলিয়ন ডলারে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সামান্য উন্নতি দেখা গেলেও পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।

এর ফল হিসেবে বিনিয়োগ কমছে, নতুন প্রকল্প শুরু হচ্ছে না, কর্মসংস্থান সৃষ্টি মন্থর- এমন প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়ছে।

এর মধ্যেই সরকার উন্নয়ন ব্যয় কমিয়েছে এবং রাজস্ব সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২২.৬৩ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবচেয়ে জরুরি হলো ব্যাংকিং খাতে সুদ–স্প্রেড কমানো, অনাদায়ী ঋণ নিয়ন্ত্রণে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো। এগুলো না হলে উৎপাদন ও বিনিয়োগে স্থবিরতা দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে. মুজেরী বলেন, অর্থনীতি এখন প্রায় স্থবির অবস্থায়।

বিনিয়োগে বড় শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যেও উৎসাহ নেই। সুদহার বাড়তে থাকলে উদ্যোক্তারা আরও পিছিয়ে যাবেন, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে চাপে ফেলবে।

তার মতে, কৃষি, এসএমই ও স্বাস্থ্যসেবায় স্বল্পসুদে ঋণ নিশ্চিত করা গেলে অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X