বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পর্যটনে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে রাঙ্গাবালীর চার সৈকত

সাইফুর রহমান রাশেদ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৬ পিএম আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৫ পিএম
রাঙ্গাবালীর চার সৈকত
expand
রাঙ্গাবালীর চার সৈকত

একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপার দৃশ্য। চোখ জুড়ানো লাল কাঁকড়ার দলবদ্ধ ছুটোছুটি, ঢেউয়ের গর্জন আর ঘন সবুজ বনাঞ্চল—সব মিলিয়ে যেন এক অপরূপ ক্যানভাস। এমন দৃশ্য দেখতে চাইলে যেতে হবে পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে। এখানে রয়েছে পর্যটনের সম্ভাবনায় ভরপুর চারটি সমুদ্র সৈকত—জাহাজমারা, তুফানিয়া, সোনারচর ও চরহেয়ার।

দীর্ঘদিন অবকাঠামোগত ঘাটতি ও দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পেছনে ছিল রাঙ্গাবালীর এই সৌন্দর্যভূমি। এখন পদ্মা সেতুর কল্যাণে সেই বাধা অনেকটাই পেরিয়ে আসছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের পদচারণা, আসছেন দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুরাও।

প্রকৃতির রঙে রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী। চারদিকে নদী ও সাগরবেষ্টিত এই অঞ্চল প্রকৃতির অফুরন্ত দানে সমৃদ্ধ। এর তটরেখা জুড়ে সারি সারি কেওড়া ও গেওয়া গাছ, আর মাঝে মাঝে দেখা মেলে জেলে নৌকার ঝাঁক।

স্থানীয়দের দাবি, কুয়াকাটা সৈকতের তুলনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এগিয়ে রাঙ্গাবালীর সৈকতগুলো। কিন্তু পর্যটন অবকাঠামো না থাকায় সেই সৌন্দর্য এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

সোনারচর—নামের মতোই সোনালি আভা

সোনারচরে সোনা নেই, আছে সোনালি ঝলক। সূর্যের আলো সৈকতের বালুর ওপর পড়লে মনে হয় যেন সোনার প্রলেপ পড়েছে। সুন্দরবনের পর আয়তনে বৃহত্তম বনাঞ্চলের একটি অংশ এই দ্বীপে অবস্থিত। রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের অন্তর্গত সোনারচর এখন অনেক ভ্রমণপিপাসুর তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে।

জাহাজমারা, তুফানিয়া ও চরহেয়ার—সবুজ-নীলে মিশে থাকা সৌন্দর্য

মৌডুবি ইউনিয়নের জাহাজমারা দ্বীপ এক অন্য রকম আবেশ ছড়ায়। সৈকতে হাঁটলেই দেখা যায় লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ। ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করে জেলে নৌকা। কাছেই তুফানিয়া ও চরহেয়ার—দুটি ছোট কিন্তু দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ। তিনটি দ্বীপ মিলে যেন গড়ে উঠেছে এক অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ত্রিমাত্রিক মঞ্চ।

যোগাযোগে বদল এসেছে

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে গলাচিপা পর্যন্ত যেতে খরচ হয় ৬০০–৭০০ টাকা। সেখান থেকে পানপট্টি বা বোয়ালিয়া ঘাট হয়ে স্পিডবোটে (১৫০ টাকা) বা লঞ্চে (৬০ টাকা) পৌঁছানো যায় রাঙ্গাবালীতে। এছাড়া সদরঘাট থেকে রাঙ্গাবালীগামী লঞ্চে যেতে পারেন সন্ধ্যা ৬টার পর। ভাড়া—সিঙ্গেল কেবিন ১,৩০০ ও ডাবল কেবিন ২,৫০০ টাকা।

আগে ঢাকা থেকে রাঙ্গাবালী পৌঁছাতে সময় লাগত ১৫–১৮ ঘণ্টা। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সময় বাঁচছে প্রায় ৭–১০ ঘণ্টা। এতে পর্যটকরা উৎসাহিত হচ্ছেন নতুন এই পর্যটনভূমি দেখতে।

রাত্রিযাপন ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের টিপস

চরমোন্তাজ ইউনিয়নে বন বিভাগের রেস্টহাউজ রয়েছে। উপজেলা শহরে আছে আবাসিক হোটেল ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। জাহাজমারায় বেসরকারি কটেজ নির্মাণাধীন রয়েছে।

অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ

চার সৈকতের কোনোটি তেই এখনো হোটেল-মোটেল বা রেস্টহাউজ তৈরি হয়নি। তবে জাহাজমারায় বেসরকারি উদ্যোগে কটেজ নির্মাণাধীন রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, রাঙ্গাবালীর চারটি সৈকতকে কেন্দ্র করে একটি ‘ট্যুরিস্ট জোন’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এলাকা পরিদর্শনও করেছেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন