শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বয়স্ক ভাতার টাকা হাতছাড়া, অর্ধাহারে দিন কাটছে সখিনার

এনপিবিনিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ পিএম
৭০ বছর বয়সী সখিনা বেগম
expand
৭০ বছর বয়সী সখিনা বেগম

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে না আছে ভরসার মানুষ, না আছে নিয়মিত খাবারের নিশ্চয়তা। এমনি করুণ বাস্তবতায় দিন কাটছে ৭০ বছর বয়সী সখিনা বেগমের। সরকারের বয়স্ক ভাতাই হতে পারত তাঁর শেষ ভরসা, কিন্তু অভিযোগ—গত তিন বছর ধরে সেই ভাতার টাকা তুলছেন অন্যরা।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের কচুয়াডহর গ্রামের বাসিন্দা সখিনা বেগম এখন আশ্রয় নিয়েছেন দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের জরাজীর্ণ ঘরে। মাথার ওপর ছাদ থাকলেও তিনবেলার খাবারের নিশ্চয়তা নেই। কখনো প্রতিবেশীর দেয়া খাবার, কখনো অন্যের দয়া—এভাবেই চলছে তাঁর জীবন।

জানা গেছে, প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন সখিনা। প্রথম সংসারের একমাত্র ছেলেও বহু বছর আগে মারা যান। দ্বিতীয় সংসারে সন্তান হয়নি। সতীনের সংসারেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবহেলার শিকার হন তিনি। সতীনের সন্তানরা বাবাকে দেখলেও দ্বিতীয় মাকে দূরে ঠেলে দেন। অভিযোগ উঠেছে, গত তিন বছর ধরে তাঁর বয়স্ক ভাতার টাকা তারাই তুলে নিচ্ছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সখিনা বেগম বলেন, “তিন বছর হলো এক টাকাও পাই না। চাইলে তারা বলে টাকা আসেনি। যদি আসত, আমার হাতেই দিত।”

তিনি আরও জানান, “আগে জঙ্গলে থাকতাম, পরে তারা আশ্রয় দিয়েছে। এখন যা পাই, তাই খাই। আজ সকালেও কে যে খেতে দিয়েছে, ঠিক জানি না, ওটাই খেয়ে আছি।”

সখিনাকে আশ্রয় দেওয়া দূরসম্পর্কের স্বজন তহিদা আক্তার জানান, “সখিনা খালার ভাতার টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ঝগড়া চলছিল। পরে তারা তাকে তাড়িয়ে দেয়। তখন তিনি জঙ্গলে ছিলেন, পরে আমার খালা তাঁকে আশ্রয় দেন।”

প্রতিবেশী সোহেল রানা বলেন, “এখন তাঁর আপন বলতে কেউ নেই। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তিনি যেন আর বঞ্চিত না হন, তাঁর প্রাপ্য ভাতা সরাসরি হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”

এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সখিনা দীর্ঘদিন ধরেই ভাতা পাচ্ছেন। তবে সার্ভার সমস্যার কারণে সঠিক উত্তোলনের হিসাব জানা যায়নি।

দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মাসুল তালুকদার বলেন, “সখিনা বেগম ভাতা পান, এটা নিশ্চিত। যে নম্বরে টাকা যাচ্ছিল, সেটি বর্তমানে বন্ধ। নম্বর পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা হবে যেন তিনি নিজ হাতে টাকা পান। এ ছাড়া, এতদিন যেসব টাকা অন্যরা তুলেছেন, সেগুলোও উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন