মঙ্গলবার
১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভাতার টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ মেম্বারের বিরুদ্ধে

মাইকিং করে প্রতিবাদ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম
কুষ্টিয়ায় বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ
expand
কুষ্টিয়ায় বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাৎ এবং মাতৃত্বকালীন ও সরকারি ঘর দেওয়ার নামে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠছে এক মেম্বারের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রায় ৩০ থেকে ৫০ জন ভুক্তভোগী প্রকাশ্যে মাইকিং করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সোমবার (১০ নভেম্বর) দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে ধর্মদহ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীরা কোনো ভাতার টাকা পান না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকাও বিগত দুই বছর ধরে ধর্মদহ গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আমজাদ হোসেনের শ্বশুরের মোবাইল নম্বরে যাচ্ছে।এরপর তারা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্যে মাইকিং প্রতিবাদ জানান।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রাপ্য ভাতার টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন আমজাদ মেম্বার। এমনকি অনেকের কাছ থেকে মাতৃত্বকালীন কার্ড ও সরকারি ঘর করে দেওয়ার নামে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ করেননি।

ভুক্তভোগী সুলতান নামের এক বৃদ্ধ অভিযোগ করে বলেন, "আমি দেড় বছরের মধ্যে মাত্র একবার ভাতা বাবদ টাকা পেয়েছি। এরপর আর কোনো টাকা পাইনি। বারবার সমাজসেবা অফিসে গিয়েও কোনো ফল হয়নি, বরং আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

পরে আমি ইউএনও স্যারের কাছে গেলে তিনি যাচাই করে দেখেন, আমার নামে থাকা ভাতার টাকা অন্য একটি নম্বরে যাচ্ছে। এরপর আমি সেই নম্বরে ফোন দিলে জানতে পারি, ফোনটি আমজাদ মেম্বারের শ্বশুরের নামে নিবন্ধিত এবং তিনিই কথা বলছেন।"

সুরাতন নেছা নামে এক বৃদ্ধা অভিযোগ করে আরও বলেন,"সরকারি ঘর দেওয়ার নাম করে মেম্বার তার কাছ থেকে ৫ ও ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমজাদ তাকে ঘর দেননি।"

লিটন নামের এক ব্যক্তি বলেন, "আমার স্ত্রী ঝুমকা খাতুনের গর্ভকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে আমজাদ মেম্বার ছয় হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তিনি না কার্ডটি করে দেননি।"

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মেম্বার আমজাদ হোসেন বলেন,"আমি প্রায় ১০ জন ভাতাভোগীর টাকা নয়-ছয় করেছি। এটা আমার ভুল হয়েছে।"

আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাকি বলেন,"গরিবের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমজাদ মেম্বার দোষী প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।"

দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, "ভাতা ভোগীদের মোবাইল নম্বরসংক্রান্ত বিষয়ে অনেক সময় নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে নিজেদের মোবাইল নম্বর না দিয়ে মেয়ের বা ছেলের নম্বর ব্যবহার করেন। ফলে টাকা অ্যাকাউন্টে গেলেও তা অনেক সময় গোপন রাখা হয়।"

তিনি আরও বলেন, "প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কমিটি রয়েছে। সুবিধাভোগীরা তাদের মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য তথ্য সেই কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আমাদের দপ্তরে জমা দেয়।

এরপর আমরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে তা ঊর্ধ্বতন দপ্তরে প্রেরণ করি। ওই অঞ্চলে যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তা তদন্ত করে দেখবো এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে প্রকৃত ভাতাভোগী তার প্রাপ্ত টাকা পান। একইসঙ্গে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন,"আমরা অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ভাতা ভোগীরা যাতে তাদের প্রাপ্য টাকা পান, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"

স্থানীয়দের দাবি- অনিয়ম-দুর্নীতির এই ঘটনার তদন্ত করে ভুক্তভোগীদের প্রাপ্য টাকা নিশ্চিত করা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন