সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যানার, ফেস্টুন ও ভাসমান দোকানে আচ্ছন্ন যাত্রাবাড়ী থানা

মাজহার ইমন
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৪ পিএম
যাত্রাবাড়ী থানার বাইরের জঞ্জালপূর্ণ চিত্র
expand
যাত্রাবাড়ী থানার বাইরের জঞ্জালপূর্ণ চিত্র

রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী। ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকাগুলোর একটি। প্রতিদিন হাজারো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানেই অবস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাবাড়ী থানা।

কিন্তু থানার বাইরের জঞ্জালপূর্ণ চিত্র দেখলে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এটি কি সত্যিই কোনো থানা, নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়?

থানার মূল ফটক ও সীমানা দেয়াল রাজনৈতিক দলের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে এমনভাবে ঢাকা যে, দেয়ালের আসল রঙই আর চোখে পড়ে না। সরকারি অফিসের সামনে এমন অগোছালো দৃশ্য রাজধানীবাসীকে যেমন বিস্মিত করে, তেমনি প্রশ্ন তোলে পুলিশের শৃঙ্খলার প্রতীক এই স্থাপনাটিই যদি শৃঙ্খলাহীনতার চিত্র বহন করে, তবে এর বার্তা কী?

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব পোস্টার ও ব্যানার অনেক সময় মাসের পর মাস ঝুলে থাকে, দেয়ালের আসল রঙ পর্যন্ত দেখা যায় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, থানার মূল ফটকের দুই পাশেই এখন গড়ে উঠেছে অস্থায়ী ভাসমান দোকানপাট। পান-সিগারেট, চা বিক্রি হচ্ছে সেখানে। এসব দোকানে রাতে বাতি জ্বলে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে। এতে একদিকে সরকারি বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। থানার সামনে দিয়ে চলে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটি চিটাগাং রোড সংযোগ।

এখানেই দেখা যায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাস ও লেগুনার ভাসমান স্ট্যান্ড। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেগুনা, বাস, রিকশা, এমনকি পিকআপ ভ্যান পর্যন্ত যাত্রী ওঠানামার জন্য থেমে থাকে থানার সামনের রাস্তায়। যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোড ও স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত দুটি রুটে অন্তত শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। এতে সড়কে তীব্র যানজটের পাশাপাশি পথচারীদের চলাচলেও ভোগান্তি পোহাতে হয়।

পথচারীরা বলেন, থানার সামনে যদি এমন বিশৃঙ্খলা থাকে, তাহলে এলাকার অন্য জায়গায় শৃঙ্খলা আশা করব কীভাবে?

ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনে যাত্রাবাড়ী থানার মূল কার্যক্রম চলে। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ডিউটি অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষ, যেখান থেকেই থানার সব প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে ভবনের ভেতরেও দেখা যায়, কিছুটা অব্যবস্থাপনা। হাত-পা ধোয়ার স্থান ও টয়লেটের অবস্থা নাজুক।

থানায় সেবা নিতে আসা কয়েকজন জানান, তারা হয়রানি ছাড়াই সেবা পেয়েছেন। একজন বলেন, জিডি করতে এসেছিলাম, পুলিশ খুব সহায়তা করেছে। কোনো প্রকার ঘুষ বা ঝামেলা হয়নি। তবে থানার আশপাশের পরিবেশ নিয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করেন। আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীর মতো গুরুত্বপূর্ণ থানার সামনের এমন অগোছালো অবস্থা মানা যায় না। থানার সামনে যদি দোকান আর লেগুনার দখলে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করবে কিভাবে?’

যাত্রাবাড়ী এলাকায় বসবাসকারী অনেকে মনে করেন, থানার মতো ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আশপাশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। থানার সামনে থেকে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে, ভাসমান দোকান উচ্ছেদ এবং অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড স্থানান্তর করতে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

বিষয়টি নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘আমরাও বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। থানার আশপাশে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম না থাকে, সে বিষয়ে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব। নাগরিকরা যেন কোনো বাধা ছাড়াই থানায় এসে সেবা নিতে পারেন, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।’

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন