সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বামী মারা গেলে নারীর ইদ্দত পালনের বিধান

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
সংগৃহীত ছবি
expand
সংগৃহীত ছবি

ইসলামে ইদ্দত পালন শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী, স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে চার মাস দশ দিন (৪ মাস ১০ দিন) ইদ্দত পালন করতে হয়।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন...

وَ الَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ مِنۡكُمۡ وَ یَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا یَّتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِهِنَّ اَرۡبَعَۃَ اَشۡهُرٍ وَّ عَشۡرًا

“আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৪)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সমগ্র স্ত্রী জাতিকে সম্বোধন করেছেন— যুবতী, বৃদ্ধা, অপ্রাপ্তবয়স্কা, বন্ধ্যা—সবার জন্যই এই বিধান সমানভাবে প্রযোজ্য।

ইসলামী আলেমদের ঐকমত্য অনুযায়ী, স্বামী মারা গেলে প্রত্যেক স্ত্রীকেই চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে, তা তিনি বৃদ্ধা, অল্পবয়সী বা সন্তান ধারণে অক্ষম যেই হোন না কেন। ইমাম ইবনু কুদামা, ইবনু আব্দিল বার, ও ইবনুল মুনযির (রহ.) একমত হয়ে বলেন, এই আয়াত সাধারণভাবে সব স্ত্রীর উদ্দেশে বলা হয়েছে; স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহবাস হোক বা না হোক, প্রত্যেক বিধবার ওপর ইদ্দত পালন ফরজ।” (আল-মুগনী ৮/১১৫; আল-ইসতিযকার ৬/১৭৮)

ইমাম তাবারী (রহ.) তাঁর তাফসিরে উল্লেখ করেছেন, বিধবা নারী ইদ্দতের সময়কালে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার, সাজসজ্জা করা বা স্বামীর জীবদ্দশায় যে বাড়িতে ছিলেন তা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।” (তাফসিরে তাবারী ২/৫২৫)

গর্ভবতী নারীর ইদ্দতকাল ভিন্ন

যদি কোনো নারী গর্ভবতী অবস্থায় স্বামীহারা হন, তবে তার ইদ্দতকাল হবে সন্তান জন্ম পর্যন্ত, সময় যতই হোক না কেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ اُولَاتُ الۡاَحۡمَالِ اَجَلُهُنَّ اَنۡ یَّضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّ ؕ

“গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল তাদের সন্তান প্রসব পর্যন্ত।” (সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪)

অর্থাৎ, গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিনের নিয়ম প্রযোজ্য নয়; বরং সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই ইদ্দত শেষ হয়।

বাসর না হলেও ইদ্দত পালন বাধ্যতামূলক

বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহবাস না হলেও, স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হবে। এমনকি নাবালিকা বা অতিবৃদ্ধা নারীও এই বিধান থেকে অব্যাহতি পান না। (মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ, খণ্ড ১৬, পৃ. ১১৪-১৩২)

ইদ্দতকালে অবস্থান

ইদ্দতের সময় বিধবা নারীকে স্বামীর জীবদ্দশায় যে ঘরে বসবাস করতেন, সেখানে অবস্থান করেই ইদ্দত সম্পন্ন করতে হবে।

হজরত ফুরাইয়া বিনতে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি নবী করিম (সা.)-এর কাছে গিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুমতি চান। নবীজি (সা.) বলেন,

امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَتْ فَاعْتَدَدْتُ فِيهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا

“ইদ্দতের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার ঘরেই অবস্থান কর।” (তিরমিজি, হাদিস: ১২০৪)

তিনি বলেন, “আমি সেই ঘরেই চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করেছি।”

ইসলামে ইদ্দত কোনো সামাজিক বাধা নয়, বরং এটি নারীর মানসিক প্রশান্তি, সম্মান রক্ষা ও পারিবারিক ভারসাম্য বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। স্বামী মারা গেলে নারী বৃদ্ধ, যুবতী বা সন্তান ধারণে অক্ষম-যেই হোন না কেন, চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করা তার জন্য ফরজ (বাধ্যতামূলক)।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন