বৃহস্পতিবার
২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস

‎কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা
expand
খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা গ্রামের পূর্বচর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বন্ধ। সরকারি খাসজমিতে স্থাপনা নির্মাণ ও দখলদারির কারণে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসেছে যে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে, সড়কের পাশের গাছতলায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। ‎ ‎১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০৪ জন, শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওয়াপদা খালের বাঁধ ছিল বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। বহু বছর ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা সেই পথ দিয়েই স্কুলে আসা–যাওয়া করতেন। কিন্তু ২০১৬ সালের দিকে সরকারি খাসজমিতে স্থাপনা নির্মাণের পর পুরো পথটাই ধীরে ধীরে দখল হয়ে যায়। ‎ ‎সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে প্রবেশের পুরোনো পথটি এখন বসতবাড়িতে দখল হয়ে গেছে। বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়া সরু পথটির সামনে এখন দেয়াল ও ঘর, যার কারণে স্কুলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায় না। কোনো বিকল্প পথ না থাকায় ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে শিক্ষকরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাঁধের পাশ ঘেঁষে সড়ক ধরে বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছান। কিন্তু বিদ্যালয়ে যেতে না পারায় বাধ্য হয়ে খোলা জায়গায় গাছের ছায়ায় শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা করছেন তাঁরা। ‎ ‎বর্ষা মৌসুমে এই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। পাশের বাড়িগুলোর জলাবদ্ধ গর্তে পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীদের হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। অনেক সময় পানির কারণে স্কুলে যাওয়া–আসাই বন্ধ হয়ে যায়, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায় চরমভাবে। শিক্ষকরা জানান, এতে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‎ ‎বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক শাহ্ আলম বলেন, ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওয়াপদা খালের বাঁধ দিয়েই আসা–যাওয়া করতাম। সরকারি হওয়ার পরও সেই পথই ছিল। কিন্তু এখন পথ পুরোপুরি বন্ধ। স্কুলে যেতে হলেও বসতবাড়ির গা ঘেঁষে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতে হয়। ‎ ‎স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ৩৫ শতক জমি দান করেন। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত পথ ছিল মূলত ৩১৩৫ এবং ৩১৩৬ দাগের ওপর দিয়ে। এর মধ্যে ৩১৩৬ দাগ ছিল সরকারি খাসজমি।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে অষ্টমীর চরের জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে একাধিক দাগে মোট ৩৬ শতক খাসজমি বন্দোবস্ত নেন এবং প্রভাব খাটিয়ে ৩১৩৫ দাগের অংশও দখল করে সেখানে বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। এতে বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ প্রবেশপথ দখলে চলে যায়। ‎ ‎বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. রিয়াদ বিন রানু বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ভয়াবহ কষ্ট করে আসতে হয়। বিষয়টি বারবার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। বাধ্য হয়ে গাছের নিচে ক্লাস নিচ্ছি। এটা খুবই লজ্জার ও দুঃখজনক। ‎ ‎তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা স্কুলের রাস্তা বন্ধ করিনি। সরকার জায়গা চাইলে দিয়ে দেব। ‎ ‎স্থানীয় ইউপি সদস্য মনসুর আলী এ ঘটনাকে “সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চরম ধৃষ্টতা বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় তিনিও প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। ‎ ‎এদিকে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক জানান, স্কুলের রাস্তা নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা লোক পাঠিয়ে সরেজমিনে প্রতিবেদন নিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন