বৃহস্পতিবার
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতারণার শিকার ৩২ হাজার গ্রাহক, উপজেলা পরিষদ ঘেরাও

মাদারগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম
উপজেলা পরিষদ ঘেরাও
expand
উপজেলা পরিষদ ঘেরাও

জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানত রাখা টাকা ফেরতের দাবিতে হাজারো আমানতকারী ফের বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টানা তৃতীয় দিনের মতো তারা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, এমনকি হাড়িপাতিলও সঙ্গে নিয়ে এসে অবস্থান নেন—যেন দীর্ঘ সময় অবস্থান করার প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছেন। এতে উপজেলা পরিষদের সরকারি দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় হতাশ আমানতকারীরা ফের আন্দোলনে নামে। ‘আমানত উদ্ধার সহায়ক কমিটি’-এর ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে প্রতারিত গ্রাহকদের পাশাপাশি সাধারণ স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এর আগে তারা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন।

জেলা সমবায় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাদারগঞ্জের ২৩টি সমবায় সমিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে আমানতকারী সংখ্যা ৩২ হাজার ৪২৪ জন। আত্মসাৎ হওয়া টাকার পরিমাণ ৭২০ কোটি ৫৩ লাখ ১৯ হাজার ১৫০ টাকা।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, প্রবাসী, দিনমজুর, শিক্ষক, পোশাক শ্রমিক ও চাকরিজীবীসহ সমাজের প্রায় সব শ্রেণির মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও স্থানীয় রাজনীতিকদের আশ্রয়ে এসব সমবায় প্রতিষ্ঠানের উত্থান ঘটে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এমনকি জামায়াত সংশ্লিষ্ট নেতাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। শুরুতে নিয়মিত মুনাফা প্রদান করে আস্থা অর্জনের পর একপর্যায়ে অফিস বন্ধ করে উধাও হয়ে যায় পরিচালকেরা। বর্তমানে অধিকাংশ কার্যালয়ে ঝুলছে তালা, আর হাজারো পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

সিআইডির মানি লন্ডারিং মামলায় ‘আল-আকাবা সমবায়’-এর পরিচালকদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের আলফা ড্রেসওয়ার গার্মেন্টস, জামালপুরের আলফা ইটভাটা, ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নয়টি প্লটসহ মোট ৩,১১৩ শতাংশ জমি।

দুই বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন আমানতকারীরা। কেউ মানবেতর জীবনযাপন করছেন, কেউ হারিয়েছেন জীবনের সমস্ত সঞ্চয়। শতদল সমবায়ের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি আমানত পরিশোধের উদ্দেশ্যে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ফেরত আসা টাকাও এখনও আমানতকারীদের হাতে পৌঁছেনি। ওই অর্থ থানার ভল্টে রাখা হয়েছে-চাবি রয়েছে সমিতির চেয়ারম্যান ও উদ্ধার কমিটির সদস্যদের কাছে। এই প্রক্রিয়াকেও অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।

আমানত উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা সন্দেহজনক। মনে হচ্ছে, সমবায় মালিকদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমনকি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও কেউ গ্রেপ্তার হননি। টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, উপজেলা পরিষদের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেবাগ্রহীতারা কোনো অফিসে ঢুকতে পারছেন না। ফলে সেবা দিতে গিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিপাকে পড়েছেন। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন