

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ফসল রক্ষার দাবিতে বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে অবস্থিত বিবিসি (বিসমিল্লাহ ব্রিকস) ইটভাটা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে আকরাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন সড়কে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সমাজসেবক জাহাঙ্গীর আলম। বক্তৃতা করেন নাশির উদ্দিন, কবির গাজী, শাহীন প্যাদা, খোকন হাওলাদারসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, ইটভাটার কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে, তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্রুত বিবিসি ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা রায়বালা গ্রামের ফসলি জমির উপর বিবিসি (বিসমিল্লাহ ব্রিকস) নামের এই ইটভাটি স্থাপন করেন। ইটভাটির চারপাশে তিন দিকজুড়ে ধানক্ষেত এবং একদিকে বসতবাড়ি রয়েছে।
প্রায় ৫০০ একর তিন ফসলি জমি, ৫ হাজারেরও বেশি গ্রামবাসী, এবং রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি এতিমখানা ও একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ইটভাটির ধোঁয়া ও দূষণের মারাত্মক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কৃষক কবির গাজী বলেন, ইটভাটা চালু হওয়ার পর থেকেই ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। আগের মতো ধান বা সবজি ফলছে না। বাতাসে ধুলো আর ধোঁয়ায় গাছেও ফল ধরে না।
অন্য কৃষক খোকন হাওলাদার বলেন, ইটভাটার কারণে গ্রামের শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়েছে। পাঁচ শত একর জমির উৎপাদন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি, বনাঞ্চল, নদী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটি স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু রায়বালায় ওই আইন অমান্য করে ইটভাটি নির্মিত হয়েছে। আইনে এ ধরনের অপরাধের শাস্তি হিসেবে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
বিবিসি ইটভাটার মালিক আব্দুল হান্নান মৃধা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র নিয়েই ইটভাটা স্থাপন করেছি। ঝিকঝ্যাক পদ্ধতির ইটভাটাতে স্বাস্থ্য বা পরিবেশের ক্ষতি হয় না। আমার শত্রুপক্ষ আমাকে হেয় করার জন্য মানববন্ধন করেছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রাসেল বলেন, বিবিসি ইটভাটাকে কৃষি অফিস থেকে কোনো অনুমোদন বা প্রত্যয়ন দেওয়া হয়নি। ফসলি জমিতে ইটভাটি স্থাপন করলে উর্বরতা হারায় ও কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বরগুনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, যেখানে পরিবেশ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে কোনোভাবেই ইটভাটি স্থাপন করা যায় না। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান খান বলেন, সরকারি নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপিত কোনো ইটভাটি চলতে দেওয়া হবে না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
