

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী বুনো শাকের রান্না প্রতিযোগিতা ও খাদ্য উৎসব।
প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম জেলেখালী কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় উপকূলীয় গ্রামীণ নারী ও পুরুষেরা অংশ নেন।
সবুজ সংহতি, স্থানীয় জনসংগঠন ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় পশ্চিম জেলেখালী গ্রামের পাঁচটি জনসংগঠনের মোট ১৬ জন নারী ও পুরুষ বাড়ির আঙিনা, খাল-বিল ও জলাশয় থেকে সংগ্রহ করা কচুশাক, মাটিফোড়া, ডুমুর, বুনো আমড়া, কলমিশাক, থানকুনি, শাপলা, কলার মোচা, আদাবরুন, কলার থোড়, কাটানুটে, ঘুমশাক, তেলাকচু, আমরুল ও মিশ্রিত শাক দিয়ে রান্না করে পরিবেশন করেন (প্রত্যেকে একটি করে পদ)।
নির্ধারিত সময়ে রান্না শেষে চলে স্বাদগ্রহণ কর্মসূচি। অংশগ্রহণকারীরা তাদের রান্নার প্রধান উপকরণ—বুনো শাক—সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এরপর ৭ সদস্যের বিচারকমণ্ডলী স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উপস্থাপনার ভিত্তিতে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
এতে বুনো আমড়া রান্না করে প্রথম স্থান অধিকার করেন যুব কৃষক প্রশান্ত নস্কর, কলমিশাক রান্না করে দ্বিতীয় হন শিক্ষার্থী জবা, এবং থানকুনি রান্না করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন কৃষাণী ঝরনা রানী মণ্ডল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন সবুজ সংহতির সভাপতি ডা. যোগেশ মণ্ডল। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবাশীষ গায়েন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ, শিক্ষক হেমা রানী, কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রি, লতা রানী, শিক্ষার্থী অনন্যা ও ধৃতিমা, কৃষক ভুধর চন্দ্র মণ্ডল, বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও মারুফ হোসেন মিলন।
বক্তারা বলেন, প্রকৃতিতে থাকা উদ্ভিদ-প্রাণবৈচিত্র্য মানুষ ও প্রাণীর খাদ্য এবং ওষুধ হিসেবে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার এবং মানব বসতি সম্প্রসারণের ফলে এসব উদ্ভিদবৈচিত্র্য ও তাদের আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে।
অথচ এগুলো গ্রামীণ মানুষের পুষ্টির অন্যতম উৎস এবং খাদ্যের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এগুলো সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সবারই উদ্যোগী হতে হবে; সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ডা. যোগেশ মণ্ডল বলেন, “এই রান্না প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃতির উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে গ্রামীণ নারীদের সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে লোকায়ত জ্ঞান প্রসারিত হবে, যা সব প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
মন্তব্য করুন