

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে শাহিনুর ইসলাম নামে পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভুড়ি ভোজের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ এর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। শাহিনুর ইসলাম নামে পুলিশের ওই কর্মকর্তা পার্বতীপুর ও ফুলবাডী নিয়ে গঠিত ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ছেলের সংবর্ধনা প্রদান উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরে নিজ বাড়িতে জমকালো এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ নেতা নুর মোহাম্মদ। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে আগতরা সেখানে অংশগ্রহন করেন। সরকারি কাজে ব্যবহৃত পুলিশের গাড়ি ও তার দেহরক্ষী নিয়ে সেই ভুরিভোজ অংশ নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর ইসলাম।
বিষয়টি জানাজানি হলে মুহুর্তেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়োজিত রক্ষক হয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভক্ষকের এমন ভূমিকা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় পুরো উপজেলায়। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হলে রোববার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে নুর মোহাম্মদ নামে আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে আটক করে থানাপুলিশ।
পরে বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠায় পার্বতীপুর মডেল থানা পুলিশ। তবে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে আটকের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে জানতে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদের বাড়িতে গেলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। একই কথা জানিয়েছেন অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী স্থানীয় লুৎফর রহমানসহ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি।
তারা জানান, জাকজমকপূর্ণ ভাবেই সেদিনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন শাহিনুর ইসলাম। প্রায় ২ ঘন্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান করে দুপুরে খাওয়া শেষে প্রায় পৌনে ১ টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর ইসলামের অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অনুষ্ঠানে নয়, মধ্যপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে, নুর মোহাম্মদের বাড়িতে যাওয়ার বিষয়টি ভিডিও থাকার পরও বিষয়টি অস্বীকারের কারণ জানতে চাইলে কল কেটে দেন তিনি।
এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পার্বতীপুরের সাধারণ মানুষ ছাড়াও বিএনপি সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আতিকুর রহমান স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেই মুহুর্তে ঘাপটি মেরে বসে থেকে জ্বালাও পোড়াও এবং ককটেল বিষ্ফোড়নের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সেই মুহুর্তে আওয়ামী লীগ নেতারব বাড়িতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ভূড়িভোজের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পূন:রায় জাগ্রত করার পায়তারা করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
পার্বতীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পরও এখনো কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে পূণর্বাসনের চেষ্টা করছে।
এলাকায় পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখিয়ে দেওয়ার পরও তাদের গ্রেফতার করাতে পারছি না। সেই সময় কিভাবে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন পদধারী আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে গিয়ে ভূড়িভোজ করেন তা আমার বোধ গম্য নয়। এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও মাঠে ফেরার আশংকা করছি আমরা।
এ বিষয়ে পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হরিরামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদকে আটক করা হয়েছে। তবে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ভূড়িভোজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে উল্লেখ করেন।
মন্তব্য করুন