শুক্রবার
২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থাভাবে চোখের আলো হারাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা 

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম
মোছা. খাদিজাতুল কুবরা (১৯)
expand
মোছা. খাদিজাতুল কুবরা (১৯)

অভাব-অনটন আর অর্থের সংকটে চোখের চিকিৎসা করাতে পারছেন না সিরাজগঞ্জের তাড়াশের এক মেধাবী শিক্ষার্থী মোছা. খাদিজাতুল কুবরা (১৯)।

২০২২ সালে তাঁর ডান চোখে ২০% ও বাম চোখে ২৫% দেখলেও ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে তার দৃষ্টিশক্তি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না পেলে হয়তো তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।

খাদিজাতুলকুবরা তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের মো. মাহবুর ইসলামের মেয়ে।

জানা যায়, খাদিজাতুল কুবরার বয়স যখন ৮ বছর। তখন সে বুঝতে পারে তার চোখের সমস্যা।পড়াশোনা করতে গিয়ে বইয়ের লেখা ছোট দেখা, ব্লাকবোর্ডের লেখা চোখে পড়ে না। প্রথমে ২০১৪সালে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর চক্ষু হাসপাতালে দেখালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেখানে চিকিৎসা হবে না বলে জানিয়েদেন। এরপর সিরাজগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালেদেখালেও সেখানে ৬ মাস চিকিৎসা নিলেও তেমন ফলাফল পাননি।

এর পর ২০১৬ সালে ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে দেখালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানান, এটা জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। গর্ভে থেকেই রেটিনা ডেমেজযার কারণে কোন উন্নতি হচ্ছে না।

তারপর ২০২২ সাল থেকে ধানমন্ডি হারুণ আই কেয়ার থেকে তাঁর চোখের চিকিৎসা হচ্ছে। তবে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার বলেছেন যেতে হবে দেশের বাহিরে। কিন্তু টাকা অভাবে ৩ বছরধরে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার।

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি খাদিজাতুল কুবরা। তিনি জানান, প্রশাসন ক্যাডারেচাকরি আমার স্বপ্ন। ২০২২ সালে ডাক্তার জানিয়েছিলেন, আমার ডান চোখে ২০% ও বাম চোখে ২৫%দেখি।

কিন্তু ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে আমার দৃষ্টিশক্তি। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না পেলে হয়তো পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারাতে হবে আমার। আমি দেখতে চাই , আমার স্বপ্ন পুরুণ করতে চাই।

স্থানীয়বাসিন্দা ও শিক্ষক মেহেরীন সুজন আদি জানান, খাদিজাতুল কুবরা ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী। সে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪। এবার শ্রুতি লেখকের মাধ্যমে এইচসি পরীক্ষায় পেয়েছেজিপিএ-৪.৮৩।

পাশাপাশি একটি বিষয়ে কম মার্ক পাওয়ায় বোর্ড চ্যালেঞ্জ করেছে। সে আশা করেজিপিএ-৫ পাবে। তবুও তার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তাই সমাজের হৃদয়বান ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে হয়তো একটি দরিদ্র পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। সু-চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তশালী, দানশীল, হৃদয়বানদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেন তিনি।

খাদিজাতুল কুবরার মা মোছা. মঞ্জুয়ারা খাতুন চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, তিন শতকের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। ছোটবেলা থেকেই মেয়ের খুব শখ পড়ালেখার।

ওই যন্ত্র দিয়ে যখন পড়ে তখন মেয়ের খুবই কষ্ট হয়। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪। এবার শ্রুতি লেখকের মাধ্যমে এইচসি পরীক্ষায় পেয়েছেজিপিএ-৪.৮৩। মেয়ের স্বপ্ন প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করার। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে চিকিৎসাকরাতে পারছি না। তার স্বপ্ন পুরুণ হবে না। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন।

খাদিজাতুল কুবরার বাবা মো. মাহবুর ইসলাম বলেন, সময় যত যাচ্ছে মেয়ের চোখের অবনতিই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমি নিজেও অসুস্থ আমার সামান্য উপার্জনে মেয়ের চোখের ব্যয়বহুল খরচ চালাবো কিভাবে। আপনার আমার সামান্য সহযোগিতায় আমার মেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। জন্মের পর থেকে দুই চোখ নিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছে সে। বর্তমানে তাঁর চোখের দ্রুত অবনতি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব খাদিজাতুল কুবরাকে দেশের বাহিরে নিয়ে গিয়ে চোখটি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এ জন্য খরচ হবে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা।

পরিবারের পক্ষে এই খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ঋণ করে একদিকে চিকিৎসা খরচ অন্যদিকে সাংসারিক খরচ চালাতে গিয়ে আমি এখন দিশেহারা। এত টাকা আমি কই পাই। সমাজে বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করছি মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার দুটিচোখের অবস্থা খুবই খারাপ। উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতসহয়তা হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি সমাজে বিত্তবানদের কাছে সহয়তা করার জন্য আহবান জানান তিনি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন