বুধবার
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সার্ভেয়ারের কিলঘুষিতে চালকের মৃত্যু, স্বজনদের দাবি হত্যা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম
সার্ভেয়ারের কিলঘুষিতে চালকের মৃত্যু
expand
সার্ভেয়ারের কিলঘুষিতে চালকের মৃত্যু

কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় বকেয়া বেতন নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সার্ভেয়ারের কিলঘুষিতে গাড়ি চালক শহিদুল ইসলামের (৫৭) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে পৌর ভবনের ১১৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। তিনি পৌরসভার শেরকান্দি এলাকার মৃত গঞ্জের আলীর ছেলে।

পুলিশ, পৌরসভা ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে নির্মিত প্রথম শ্রেণির কুমারখালী পৌরসভায় প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তারা প্রায় ৪২ মাসের ১০ কোটি টাকা বেতন পাবেন পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট। সকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে গাড়ি চালক শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। সেসময় ১১৫ নম্বর কক্ষের সার্ভেয়ার ফিরোজুলের কক্ষটি বন্ধ করতে যান। তখন ফিরোজুলের সঙ্গে শহিদুলের তর্কাতর্কির একপর্যায়ে কিলঘুষি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

পরে পৌরসভায় কর্মরত অন্যান্যরা ফিরোজুলকে ১১৫ নম্বর এবং শহিদুলকে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে ১০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে পৌরসভায় কর্মতরা দেখেন শহিদুল পাকা মেঝেতে পড়ে আছেন।পরে তারা তাকে উদ্ধার করে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শহিদুলের মেয়ে সুবর্ণা খাতুন বলেন,"পৌরসভায় বড় কর্মচারীদের বেতন হয়। আমার বাবা ছোট কর্মচারী। পৌরসভা তার বেতন দেয়না। সকালে বেতন চাইতে গেলে পৌরসভার সার্ভেয়ার মো. ফিরোজুল ইসলাম বাবাকে ব্যাপক কিলঘুষি, লাথি মারে হত্যা করে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রেখেছিল। আমি থানায় মামলা করব।"

প্রত্যক্ষদর্শী পৌরসভার বাজার পরিদর্শক নুর ইসলাম বলেন,"ফিরোজ কাজ করছিল কার্যালয়ে। তখন শহিদুল বেতন না পেয়ে দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিল। সেসময় ফিরোজের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তাঁর ভাষ্য, শহিদুল হার্টের রোগী ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়। তবে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।"

সরেজমিন কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতার ভিড়। নিহত শহিদুলের মুখে আঘাতের ক্ষত। স্বজনা আহাজারি করছেন। এ সময় শহিদুলের ভাগ্নি রূপালী খাতুন বলেন, পৌর ভবনের পিছনে আমার বাড়ি। মারামারির খবর শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি ১০১ নম্বর কক্ষে তালাবন্ধ মামা। খুলে দেখি মুখে দাঁতে আঘাতের চিহৃ-রক্ত। তাঁর ভাষ্য, মামাকে পৌরসভার লোকজন বেতনের জন্য হত্যা করেছে। সঠিক বিচার চাই।

এ দিকে পৌরসভায় বেতন নিয়ে এমন ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে নিহত শহিদুলের স্বজনা ও এলাকাবাসী। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে পৌরসভায় শেরকান্দি এলাকার অভিযুক্ত ফিরোজুলের বহুতল ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। পরে সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে কুমারখালী পৌর ভবনের প্রধান ফটক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন তারা।

এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন পৌরসভার সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলাম। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রকৃত ঘটনা এখনও জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, মরদেহটি ময়নাতদন্তের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে বকেয়া বেতন নিয়ে ঘটনার সুত্রপাত।তিনি আরও বলেন, উত্তেজিত জনতা সার্ভেয়ারের বাড়ি ভাঙতে গেলে পুলিশ তা ঠেকিয়ে দিয়েছে।

সরকারি প্রশিক্ষণের কাজে জেলার বাইরে থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি কুমারখালী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মিকাইল ইসলামের। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বকেয়া বেতন নিয়ে বাগবিতণ্ডায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন