

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মাধবপুর গ্রামে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৩ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ ও রাস্তা তৈরি কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে মাধবপুর গ্রামীবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মাধবপুর-বালিহুদা গ্রামের ব্রিজ ও রাস্তা তৈরি কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন গ্রামীবাসীরা। তারা নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণের দাবি করায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করেছেন ঠিকাদার জাকাউল্লাহ এ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী জাকাউল্লাহ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আবুল কালাম, আমিনুল মেম্বার, আক্তার হোসেন, আবু তালেব, সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আবুল কাশেম, আসাদুল ইসলাম, আইজদ্দী আহমেদ, রবিউল ইসলাম, মহিউদ্দিন ভোলা, মহি মোল্লা, তরিকুল ইসলাম, নাজিরুল, মহিদুল, আতিয়ার, আলামিন, রেজাউলসহ গ্রামে শতাধিক বাসিন্দা।
মাধবপুর গ্রামবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সময় বলেন, রবিবার (১৬ নভেম্বর) ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার ধারে কয়েকটি গাইড পিলার স্থাপণ করেন ঠিকাদার জাকাউল্লাহ। সেগুলো নিম্নমানের হওয়ায় প্রতিবাদ জানায় গ্রামবাসী। এ সময় কয়েকটি পিলার নিম্নমানের হওয়ায় হাত দিয়ে নড়াচড়া করায় ভেঙে যায়। এ ঘটনার পর জাকাউল্লাহ জীবননগর থানায় মাজেদুল ইসলাম, কামাল, নাজিরুল ইসলাম, আক্তার হোসেন, আসাদুল ইসলাম ও মাইদুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ আরও ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত রেখে জীবননগর থানায় অভিযোগ দেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত গ্রামবাসী বলেন, শুরু থেকেই ব্রিজের কাজে অনিয়ম হয়ে আসছে। তখন আওয়ামী লীগ সরকার থাকায় প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার হুমকি দেয়া হতো। এখনও প্রতিবাদ করায় মামলা হচ্ছে। আমরা প্রতিকার চাই। এখানে কাজ একেবারে নিম্নমানের হচ্ছে। হাত দিলেই সিমেন্টের ঢালাই ভেঙে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হচ্ছে। বালিহুদা গ্রামের আলমগীর হাসান বলেন, নদীর পাড়ে আমাদের নিজস্ব জমিতে বসতবাড়ি। যখন ব্রীজের সম্ভাব্যতা যাচাই করে তখন আমাদের বাড়ি বরাবর ব্রীজ নির্মানের পরিকল্পনা করে। আমাদের বাড়ি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা হয়। এরপর আমরা ১০ শতক জমি দান করি। যার কোন ক্ষতিপুরন নিইনি। আমাদের জমি নিয়েছে কিন্তু ব্রীজটি পরিকল্পনা মাফিক না হওয়ায় সৌন্দর্য হারিয়েছে। আমাদের বাড়িটিও ব্রীজে আটকে গেছে।
গনমাধ্যম কর্মী ফৈরদৌস ওয়াহিত বলেন, আমাতের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের উপর ব্রীজটি। ভৈরব নদ খনন করে প্রশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু নবনির্মিত ব্রীজটি পরিকল্পনা মাফিক না হওয়ায় নদটি ব্রীজের নীচে সরু খালে পরিনত হয়েছে।
কৃষক সোহাগ নামের এক গ্রামবাসী জানান, তিনি তার জমিতে সার দিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় জীবননগর থানার এসআই আসলাম তাকে একটি ভিডিও দেখিয়ে বলেন,যারা পিলার ভেঙ্গেছে এদের চিনিস কি না ? কৃষক সোহাগ প্রতি উত্তরে না বললে,এসআই আসলাম তাকে চুল চেপে ধরে মারধর করে। তবে এসআই আসলাম মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলা এলজিইডির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রোগ্রাম ফর সাপোর্ট রুরাল ব্রিজ (এসইউপিআরবি) প্রকল্পের অধীন সন্তোষপুর আর এ্যান্ড এইচ আন্দুলবাড়ীয়া জিসি হাসাদহ আর এ্যান্ড এইচ সড়কের ১৪১ দশমিক ২০ মিটার চেইন ৮১ দশমিক ৬০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজের ক্যাপাসিটি এক্সপারশনকরণ কাজটি অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্যাকেজ নং সাপআরবি/চুয়া/সিই/২২-২৩/ডব্লিউ -৪১ কাজটি পায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জীবননগরের জাকাউল্লাহ এ্যান্ড ব্রাদার্স। একাজের চুক্তি মূল্য ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৩ টাকা। প্রাক্কলন মূল্য ছিল ৪ কোটি ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ১১৪ টাকা। ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ২০ জুলাই এবং কার্যাদেশ মোতাবেক শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ২০ জুলাই। কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ বাড়ানো হয়।
জীবননগর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগ এবং তাদের চাহিদার বিষয়ে তিনি সরেজমিন বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগীতায় চলমান ব্রিজের কাজ পরিদর্শন করেন। ব্রিজের দুপাশে রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত কাজগুলো তিনি কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীদের চাহিদা মত ভালভাবে কাজটি শেষ হবে বলে তিনি দাবী করেন।
ঠিকাদার জাকাউল্লাহ বলেন, এই ব্রিজের কাজটি আমি প্রায় শেষ করে এনেছি। তখন কিছু ব্যক্তি না বুঝে কাজটিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এ জন্য আমি কয়েকজনের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় অভিযোগ করেছি।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন হোসেন বিশ্বাস জানান, ঠিকাদার জাকাউল্লাহ থানায় অভিযোগ দিয়েছে। এ কারনে থানা থেকে তদন্তের জন্য এসআই আসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঠিকাদার জাকাউল্লাহ ভাল মানের ঠিকাদার। ব্রিজটি কালো পাথর ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশ করলে বিশ্ব ব্যাংক সকল সুযোগ বন্ধ করে দেবে। ব্রিজ সংক্রান্ত সংবাদ না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
মন্তব্য করুন