

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


প্রতিবেশী দেশের সাথে সমতার সম্পর্ক থাকবে; দাদাগিরির সুযোগ নেই। ক্ষমতায় গেলে পদ্মা-তিস্তার পানি বণ্টন ও ফারাক্কা ইস্যুতে গুরুত্ব দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যাম পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক দেশ তার নিজের স্বার্থ দেখবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে, নির্বাচিত সরকার না থাকলে দাবি আদায় সম্ভব হয় না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পদ্মা-তিস্তার পানি বণ্টনকে গুরুত্ব দেবে।
অসম পানিবণ্টন চুক্তি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দেশের বেশ কয়েকটি নদ–নদীতে বিশেষত পদ্মা। নদীগুলোতে শুকিয়ে যাওয়া, বর্ষায় ভয়াবহ ভাঙন এবং নাব্যতা সংকটে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘চলো যাই ভাই, পদ্মা বাঁচাই’ স্লোগানে বড় সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি।
সমাবেশের আগে মহানন্দা নদীর তীর পরিদর্শন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ন্যায্য পানিবণ্টন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের ‘দাদাগিরি’ বন্ধে চেষ্টা করা হবে।
ফখরুল বলেন, পদ্মার পানি আমরা যথাযথভাবে পাচ্ছি না এটা সবারই জানা। ২০২৬ সালে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর কী ঘটবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ফারাক্কার কারণে গঙ্গার পানি আটকে রাখার ফলে আমাদের উত্তর–দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্রায় মরুকরণে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য ছোট নদ–খাল শুকিয়ে গেছে। জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এসব বিষয়ে আলোচনার পরও ভারত পানিবণ্টনে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে জিয়াউর রহমানের করা ১৯৭৭ সালের চুক্তির পর কিছু পানি পাওয়া গেলেও পরবর্তী সময়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক নিয়মিত হয়নি, যা বর্তমানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ–৩ আসনের প্রার্থী হারুনুর রশীদের উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘পদ্মা বাঁচাও আন্দোলন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পদ্মার প্রবাহ রুদ্ধ হওয়ায় মানুষের জীবন–জীবিকা থমকে গেছে। তাই এই আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্যাঞ্জেস ব্যারেজ রাজবাড়ী এলাকায় নির্মিত হলে দক্ষিণ–উত্তর–মধ্যাঞ্চলের বিশাল অংশ উপকৃত হবে। আমরা চাই এই দাবিটি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে যাক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচিত হোক।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট। নদীগুলোকে বাঁচাতে না পারলে এবং পরিবেশকে রক্ষা না করতে পারলে ভবিষ্যতে দেশকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
ফখরুলের মন্তব্য, এসব সার্বজনীন স্বার্থ রক্ষায় জনগণের ভোটে গঠিত সরকার প্রয়োজন। তিনি বলেন, যে দেশই হোক, সবারই নিজের স্বার্থ থাকে। আমাদেরও সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তবে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসা সরকার এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর শক্তি পায় না। জোর করে ক্ষমতায় থাকার মতো অবস্থায় তো আরও নয়।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পানিবণ্টনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “গ্যাঞ্জেস প্রকল্প, তিস্তা ইস্যু, ফারাক্কার বিষয় এসবই আমাদের অগ্রাধিকার। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতি সমতা সবক্ষেত্রেই আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে উঠুক। আমাদের ওপর প্রভাব খাটানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
১৯৭১ সালে তারা আমাদের পাশে ছিল, অথচ সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি সবই তারা নিয়েছে, আমাদের দিয়েছে খুব কম। আগের সরকারের সময় এই দুরবস্থা আরও প্রকট হয়েছে। তাদের মন্ত্রীরা ভারত সফরে গিয়ে ব্যক্তিগত উদাহরণ টেনে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন যা বাংলাদেশের মর্যাদাকে ছোট করে। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিত দেশের স্বার্থ রক্ষা।
মন্তব্য করুন
