

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


২০০৭ সালে বরগুনার উপকূলে সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাত হানার আগে ঘূর্ণিঝড় পূর্ভাবাস প্রচারকরে পাঁচ হাজারেরও বেশী মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন জয়দেব দত্ত। পরবর্তীতে যিনি সিডরম্যান হিসেবে বিশ্বব্যপী পরিচিতি পান। আজ প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৮ বছর পূর্ন হলো।
সিডরম্যান জয়দেব দত্তের জন্ম বরগুনার তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নে। তিনি সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) ইউনিট প্রধান ও ওয়ারলেস অপারেটর ছিলেন।
২০০৭ সাল, নভেম্বরের ১১-১২ তারিখ থেকে ধমকা হাওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে বলে সতর্কবার্তাও দিতে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রতিদিনের মত ১৪ নভেম্বর রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে জয়দেব। এমন সময় তার কাছে খবর আসে সংকেত বাড়িয়ে ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত জারি করে আবহাওয়া বিভাগ।
সাথে সাথে তিনি ভাড়াকরে আনা মোটরসাইকেল ও হ্যান্ডমাইক নিয়ে নেমে পড়েন উপকূলীয় জনপদে। '১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত ২০ ফুট পানি, সবাই নিরাপদ যায়গায় চলে যান' শুধু এই তথ্যটি বারবার প্রচার করতে থাকেন জয়দেব। রাত ঘনিয়ে সকাল চলে তার এই সতর্কতা প্রচার।
পরদিন সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে প্রচার। তালতলী উপজেলার পাচ হাজারেরও বেশী মানুষের কাছে সতর্কবার্তা নিয়ে পৌছে গিয়েছিলেন তিনি। ওই ইউনিয়নের সবাই তার কথা অনুযায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলো।
এরপর ১৫ নভেম্বর রাত আটটা নাগাদ ২৩০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার বেগে বরগুনার উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। ভেসে যায় গাছ পালা, হাস মুরগি, গবাদিপশুসহ কয়েক হাজার বশতঘর। হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। তবে সিডরম্যান জয়দেব দত্তের সাহসিকতায় এবং আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহবানে সেদিন সাড়া দিয়েছিলেন ইউনিয়নের পাঁচ হাজারের ও বেশি মানুষ। সিডরের ভয়াবহ ছোবলে উপকূলের লাখো মানুষ মুহুর্তেই সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল সেদিন। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬৪ জন। ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত।
তবে সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাত হানার ১৮ বছর পেড়িয়ে গেলেও উপকূলীয় মানুষ এখনও স্মরন করছে জয়দেব দত্তকে। তাকে নিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে প্রচারিত হয়েছিল বিশেষ প্রতিবেদন। ইত্যাদি তাকে সিডরম্যান উপাধি দেয়। এছাড়াও ২০০৮ সাল জাতীয় রেড ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচির বরগুনা ইউনিট প্রধান জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, সিডরে তালতলীতে নিহত হয়েছেন ১৫০ জন, নিখোঁজ ১১৪ ও আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫শ জনেরও বেশি । তবে জয়দেব দত্তের প্রাণপণ চেষ্টার কারণে হতাহতের সংখ্যা অনেক কমেছে। তার কৃতিত্বের জন্য তিনি উপকূলবাসীদের কাছে আজীবন অমর হয়ে থাকবেন।
২০১৭ সালের ৫ আগস্ট তালতলীর বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের সিপিপির অফিস থেকে জয়দেব দত্তর মরদেহ ও একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। ধারনা পারিবারিক কলহের কারনে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
মন্তব্য করুন