বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালের ৩৮ নদীর অর্ধেক ভাঙন ঝুঁকিতে

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১১ পিএম
বরিশালের ৩৮ নদীর অর্ধেক ভাঙন ঝুঁকিতে
expand
বরিশালের ৩৮ নদীর অর্ধেক ভাঙন ঝুঁকিতে

বরিশাল জেলার ৩৮টি নদীর ১,০৮০ কিলোমিটার নদীপথের প্রায় অর্ধেকই এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে একসঙ্গে ১৮০টি স্থানে নদীভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ২৮’শ কোটি টাকার দুটি বৃহৎ প্রকল্প প্রস্তাব করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মেহেন্দিগঞ্জ, উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলার নদীভাঙন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাউবো বরিশাল নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার দশটি উপজেলার মধ্য দিয়ে ছোট-বড় ৩৮টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অতিবৃষ্টি— এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এসব নদীর তীরে প্রতিনিয়তই ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ভাঙনরোধে বিভিন্ন স্থানে ব্লক ও জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হলেও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে সেসব উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হচ্ছে না।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যায় বানারীপাড়া, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, উজিরপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাত্র ৫০০ মিটারের মধ্যে ১৮০টি ভাঙন স্পট চিহ্নিত হয়েছে। এসব স্থানের মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেঘনা, তেতুলিয়া, সন্ধ্যা ও কারখানা নদীর তীরবর্তী এলাকা।

অন্যদিকে, জেলার অনেক এলাকায় বন্যার পানি নদী থেকে ফসলি জমিতে ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি করছে। কিন্তু বরিশাল উপকূলীয় জেলা না হওয়ায় এখানকার জন্য আলাদা বেরিবাঁধ প্রকল্প নেয়া হয় না। ফলে কৃষকরা অভিযোগ করছেন, পাউবো শুধুমাত্র ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ, কৃষি ও জনজীবন রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে পাউবো বরিশাল নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও অনিয়মিত বালু উত্তোলনের কারণেও ভাঙন তীব্র হচ্ছে। তবে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এসব এলাকায় স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ সম্ভব হবে।”

তার মতে, ইতিমধ্যে মেহেন্দিগঞ্জের দক্ষিণ উলানিয়া, চানপুর, শ্রীপুর ও সদর ইউনিয়নের ১১.৫ কিলোমিটার নদীতীরে ব্লক ও জিও ব্যাগ স্থাপনের কাজের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। অপরদিকে বাবুগঞ্জ ও উজিরপুর উপজেলার ২৬ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২,১০০ কোটি টাকা। দুটি প্রকল্পই বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনাধীন রয়েছে।

বর্তমানে বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ও সেনানিবাস সংলগ্ন নদী এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

পাউবো দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহিদুল সুমন বলেন, “বরিশালের অধিকাংশ নদীভাঙন অতিবৃষ্টি, বন্যা ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এখন ভাঙনের হুমকিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব এলাকা রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।”

তিনি আরও জানান, নদীভাঙন প্রতিরোধের পাশাপাশি কীর্তনখোলা নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণ প্রকল্পও জমা দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় মানুষকে নদীর তীরে মাটিকে শক্তভাবে ধরে রাখতে সক্ষম গাছপালা— যেমন বাইন, গোলপাতা, বেত ও কেওড়া— রোপণের আহ্বান জানান।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন