মঙ্গলবার
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিলে-মিশে প্রশ্ন ফাঁস, চাকরি পেলেন দাতা সদস্যের ছেলের বউ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
কুতুবপুর ফাজিল মাদ্রাসা
expand
কুতুবপুর ফাজিল মাদ্রাসা

বরগুনার আমতলীতে মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, মাদ্রাসার দাতা সদস্য আব্বাস মৃধার ছেলের বউ আল্পনা আক্তারকে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ করেছেন একই পরীক্ষার দুই প্রার্থী তামান্না ও সাবিনা আক্তার। তারা জানান, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করেছেন। এ ঘটনায় সোমবার মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বরগুনার জেলা প্রশাসক ও আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর ফাজিল মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে গত ৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ মাওলানা নিজাম উদ্দিন আকন। ওই পদে ১১ জন আবেদন করেন। আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন অধ্যক্ষের ছেলে রেদওয়ানুল ইসলাম আবির আকন (ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী), তার ভাগ্নে আরিফুর রহমান এবং দাতা সদস্য আব্বাস মৃধার ছেলের বউ আল্পনা আক্তার।

অভিযোগ রয়েছে, দাতা সদস্য আব্বাস মৃধার ছেলের বউ আল্পনাকে নিয়োগ দিতে অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন আকন ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেন। এর অংশ হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষায় আল্পনাকে এগিয়ে রাখতে তার ছেলে ও ভাগ্নেকেও প্রার্থী বানানো হয়।

গত শনিবার অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ১১ জনের মধ্যে ৯ জন অংশ নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, অধ্যক্ষের যোগসাজশে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে গোপনে আল্পনাকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে একই প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করেই অধ্যক্ষের ছেলে আবির আকন, ভাগ্নে আরিফুর রহমান ও আল্পনা আক্তারের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। গত রবিবার আল্পনা আক্তারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরীক্ষার্থী তামান্না ও সাবিনা বলেন, আল্পনাকে চাকরি দিতে অধ্যক্ষ ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তার যোগসাজশে ডিজির প্রতিনিধি দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করেছেন। এটা সম্পূর্ণ সাজানো নিয়োগ বোর্ড। আমরা এ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

অধ্যক্ষ মাওলানা নিজাম উদ্দিন আকন তার ছেলে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বলে স্বীকার করে বলেন, আল্পনা নামের একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি দাতা সদস্য আব্বাস মৃধার ছেলের বউ কি না, তা আমি জানি না। বিধি মোতাবেক নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে।

মাদ্রাসার সভাপতি ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মোঃ জিয়াদুল কবির বলেন, লিখিত পরীক্ষায় আবির, আরিফুর রহমান ও আল্পনা আক্তার উত্তীর্ণ হয়েছেন। আল্পনা প্রথম হওয়ায় তাকেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। তবে অধ্যক্ষের ছেলে ও দাতা সদস্যের ছেলের বউ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনিয়ম নয় কি—এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ মিথ্যা। বিধি মোতাবেক পরীক্ষা নিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান খান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন