শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘পিরিয়ড ট্যাক্স’-এর বিরুদ্ধে মাহনুর ওমরের লড়াই

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
মাহনুর ওমর
expand
মাহনুর ওমর

কৈশোরের কঠিন অভিজ্ঞতাকে প্রেরণা হিসেবে নিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক লড়াইয়ে নেমেছেন পাকিস্তানের তরুণ আইনজীবী মাহনুর ওমর। রাওয়ালপিন্ডিতে বেড়ে ওঠা এই সাহসী নারী সম্প্রতি পাকিস্তানে নারীদের বিরুদ্ধে চলমান প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের প্রতিবাদে আইনি লড়াই শুরু করেছেন।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় মাহনুর বলেন, “শৈশব থেকেই দেখেছি, সমাজে নারীরা নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়—বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে।”

তার ভাষায়, “যেহেতু আমাদের হাতে আইনচর্চার লাইসেন্স আছে, তবে কেন সেটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বিশেষত নারীদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে, ব্যবহার করব না?”

২৫ বছর বয়সী এই তরুণ আইনজীবী সম্প্রতি লাহোর হাইকোর্টে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন, যেখানে তিনি স্যানিটারি প্যাডসহ মাসিক স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলোর ওপর আরোপিত সরকারি করকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, এই কর আসলে নারীদের ওপর চাপানো এক ধরনের বৈষম্যমূলক ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক পণ্য নারীর মৌলিক স্বাস্থ্য চাহিদার অংশ হলেও সরকার সেগুলোকে ‘বিলাসপণ্য’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে অন্যায্যভাবে উচ্চ কর আরোপ করছে। মাহনুরের এই উদ্যোগ দেশজুড়ে লিঙ্গসমতা ও নারীর স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে নতুন এক বিতর্কের সূচনা করেছে।

মাহনূর জানান, ‘মাসিক একটি স্বাভাবিক জৈব প্রক্রিয়া, অথচ আমরা আমাদের মেয়েদের এ বিষয়ে শিক্ষা দিই না। অনেক কিশোরী প্রথমবার পিরিয়ড হলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আর অনেক মা নিজের মেয়ের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলতে ভয় পান। যদি আমরা পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারি, তাহলে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়েও কেন পারব না?’

এই দাবি তুলে মাহনুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা ও বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন। তবে দমে যাননি।

মাহনুর বিশ্বাস করেন মানুষের মানসিকতা একদিন বদলাবে। ‘নারীদের বিষয়ে আমাদের সমাজে এক ধরনের শূন্যতা আছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এই মামলা জিতলে নারীর স্বাস্থ্য উন্নত হবে, রোগ কমবে, আর সমাজের মানসিকতাও বদলাবে।’

লাহোর কোর্টে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে স্যানিটারি প্যাডের ওপর প্রায় ৪০% কর আরোপ করা হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১৮% বিক্রয়কর এবং আমদানি করা উপকরণের ওপর প্রায় ২৫% শুল্ক।

মাহনূরের মতে, এই করগুলো দেশটির সংবিধানের ৩, ১৪, ২৫ ও ৩৭ অনুচ্ছেদের অধীনে নারীর সমতা, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ের অধিকারের লঙ্ঘন।

তার মামলাটি দেশে ‘ট্যাক্সে লিঙ্গবৈষম্য’ ও ‘স্বাস্থ্য পণ্যে অসম প্রবেশাধিকার’ নিয়ে জাতীয় আলোচনা জাগিয়েছে। বিভিন্ন পেশার নারী এতে সমর্থন জানিয়েছেন।

লাহোর হাইকোর্ট ইতোমধ্যে ফেডারেল সরকার, ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ (এফবিআর) ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নোটিশ দিয়েছে জবাব দিতে।

যদি আদালত এই করকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, তাহলে এটি একটি ঐতিহাসিক নজির তৈরি করবে।সরকারকে বাধ্য করবে স্যানিটারি প্যাডকে ‘অত্যাবশ্যক পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং সব কর তুলে নিতে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন