

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর প্রায় এক যুগ পর দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক যোগাযোগের নতুন দরজা খুলেছে। ১৯৭১ সালে বিচ্ছেদের পর সম্পর্ক বহুবার ওঠা–নামার মধ্য দিয়ে গেলেও এবার ইসলামাবাদ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর ইসহাক দার সফরটিকে “ঐতিহাসিক” আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি দুই দেশের নতুন করে হাত মেলানোর শুরু। তাঁর ভাষায়, “দুই দেশের তরুণ প্রজন্ম একসাথে কাজ করলে দক্ষিণ এশিয়ায় বড় পরিবর্তন সম্ভব।”
দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে সম্পর্ক
এই সফর কেবল কূটনৈতিক সৌজন্য নয়—এর পেছনে রয়েছে গত কয়েক মাস ধরে চলা সামরিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগের ধারাবাহিকতা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা–ইসলামাবাদ সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে চোখে পড়ার মতো গতিতে। পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিকরা অবশ্য সতর্ক করে বলছেন, অতীতের ক্ষত এখনও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিবন্ধক হতে পারে।
জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ইসলামাবাদ সফর, এরপর ফেব্রুয়ারিতে নৌপ্রধানের যাওয়া, মার্চে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা আসা—সব মিলিয়ে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইসহাক দারের সফরও আসলে বিলম্বিত একটি পরিকল্পনা, যা ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের কারণে কয়েক মাস পিছিয়ে যায়।
কৌশলগত হিসাব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের এই দ্রুত তৎপরতা নিছক সৌজন্য নয়; এর পেছনে রয়েছে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষার কৌশল। ঐতিহাসিকভাবে সরকার পরিবর্তন ঢাকার ভারত ও পাকিস্তান–সংক্রান্ত নীতিকে পাল্টে দেয়। ইসলামাবাদ মনে করছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েন তাদের জন্য কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশই ঢাকাকে নিজেদের আঞ্চলিক স্বার্থের প্রিজমে দেখে এসেছে। দীর্ঘ দশক পেরিয়ে গেলেও সেই মানসিকতা পুরোপুরি বদলায়নি।
চীনের ছায়া
আঞ্চলিক সমীকরণে চীনের ভূমিকা বিষয়টিকে আরও জটিল করছে। শেখ হাসিনা সরকার দক্ষতার সঙ্গে ভারত ও চীনের সম্পর্ককে ভারসাম্যে রেখেছিল। তাঁর পতনের পরও বেইজিং ঢাকায় সক্রিয়, সামরিক কেনাকাটা ও কৌশলগত সহযোগিতা চলছে পুরোদমে। যেহেতু চীন পাকিস্তানেরও ঘনিষ্ঠ মিত্র, ফলে ইসলামাবাদ ও ঢাকার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এই সংযোগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থনীতির সম্ভাবনা
রাজনৈতিক তিক্ততা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দুই দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পাটজাত পণ্যের বাজার পাকিস্তানে রয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তান তুলা, চাল, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প খাতে সহায়তা করতে পারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনো সীমিত, কিন্তু সম্ভাবনা অনেক।
অতীতের ছায়া এখনও রয়ে গেছে
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার না করা—এই দুটি ইস্যু এখনও দুই দেশের সম্পর্কের বড় অন্তরায়। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চায়, পাকিস্তান সেটি দিতে অনিচ্ছুক। উর্দুভাষী বিহারিদের নাগরিকত্ব ও পুনর্বাসনের প্রশ্নও ঝুলে আছে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে মেলবন্ধনের ইচ্ছা শক্তিশালী, যা রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সম্পর্ক নতুন পথে এগোতে পারে।
মন্তব্য করুন