শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওয়াংচুকের দাপটে কাপছে মোদি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
expand
ওয়াংচুকের দাপটে কাপছে মোদি

লাদাখের জনপ্রিয় উদ্ভাবক ও সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করার পর ভারতে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংস আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করে লাদাখ থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরের যোধপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে মোদী সরকারের প্রতি নানা প্রশ্ন উঠছে।

লাদাখে জন্ম নেওয়া সোনম ওয়াংচুক একজন প্রকৌশলী, উদ্ভাবক ও পরিবেশকর্মী। ২০০৯ সালের বলিউড চলচ্চিত্র ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ‘ফুংসুখ ওয়াংডু’ চরিত্রটি তার জীবন ও কাজ থেকে অনুপ্রাণিত। শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার, পরিবেশ রক্ষা এবং স্থানীয় অধিকার আন্দোলনে তার অবদান তাকে দেশজুড়ে পরিচিত করেছে।

লাদাখে রাজ্যের মর্যাদা ও স্থানীয় অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় সহিংসতায় চারজন নিহত ও অন্তত ৮০ জন আহত হন। আন্দোলনের দুই দিন পর, গত ২৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ জাতীয় নিরাপত্তা আইনে ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করে। নিরাপত্তার অজুহাতে লেহ শহরে মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগেই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার সংস্থা হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভস লাদাখ (HIAL)-এর বিদেশি তহবিলের লাইসেন্স বাতিল করে। অভিযোগ করা হয়, তহবিলের অপব্যবহার ও অঘোষিত ব্যাংক হিসাব রয়েছে। ওয়াংচুক এসব অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, তাকে আন্দোলন থামাতে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। বর্তমানে সিবিআই ও আয়কর দফতর তার সংগঠনের আর্থিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে।

১৯৬৬ সালে লাদাখে জন্ম নেওয়া ওয়াংচুকের শৈশব ছিল প্রতিকূলতায় ভরা। গ্রামে স্কুল না থাকায় নয় বছর বয়স পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি। তার মা স্থানীয় ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষায় সহায়তা করেন। পরে বাবা জম্মু-কাশ্মীর সরকারের নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি শ্রীনগরে পড়াশোনা শুরু করেন, তবে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে সেখানে মানিয়ে নিতে পারেননি। পরে দিল্লির বিশেষ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষা জীবন এগিয়ে নেন।

১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, শ্রীনগর (তৎকালীন আরইসি) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরবর্তীতে ফ্রান্সের গ্রেনোবলের ক্রাটেরে স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে মাটির স্থাপত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।

১৯৮৮ সালে সহপাঠীদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ (SECMOL), যার লক্ষ্য ছিল স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা। ১৯৯৪ সালে শুরু হওয়া ‘অপারেশন নিউ হোপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতায় লাদাখের স্কুলগুলো সংস্কার করা হয়। এসইসিএমওএল ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ সৌরশক্তিনির্ভর, যেখানে রান্না, গরম বা আলো কোনো কিছুর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয় না।

ওয়াংচুক ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত লাদাখের একমাত্র প্রিন্ট ম্যাগাজিন ‘লাদাগস মেলং’-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তিনি চালু করেন ‘আইস স্টুপা’ প্রযুক্তি—যার মাধ্যমে শীতকালে পানি জমিয়ে বসন্তকালে তা ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়, যা খরাপ্রবণ লাদাখে পানির সংকট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরবর্তীতে তিনি হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভস লাদাখ (HIAL) প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্থানীয় পরিবারভিত্তিক পর্যটন প্রকল্প ফার্মস্টেস লাদাখ শুরু করেন। এসব উদ্যোগ লাদাখে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর লাদাখের বিশেষ মর্যাদা উঠে গেলে ওয়াংচুক জনস্বার্থে সোচ্চার হন। তিনি ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে লাদাখকে সুরক্ষা দেওয়ার দাবি তুলেন এবং সম্পদ শোষণ ঠেকাতে নানা কর্মসূচি চালান। জলবায়ু সচেতনতা ও রাজনৈতিক অধিকার আন্দোলনে একাধিকবার অনশন করেছেন তিনি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন