

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


গাজার মতোই এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশার। রাস্তাজুড়ে পড়ে আছে অসংখ্য মৃতদেহ, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ আর আতঙ্কের ছাপ। শহরটি দখলের পর থেকেই বেসামরিক মানুষের ওপর ভয়াবহ সহিংসতা চালাচ্ছে আধাসামরিক সংগঠন র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)।
গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর শহরটিকে পরিণত করা হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কাউকেই রেহাই দেয়নি আরএসএফের সৈন্যরা। খাদ্য সংকট, গোলাগুলি ও নির্বিচার হত্যার মধ্যে জীবন বাঁচাতে মানুষ পালাচ্ছে পায়ে হেঁটে শত শত কিলোমিটার দূরে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, শহর দখলের পর থেকে অন্তত ৬০ হাজারের বেশি মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এল-ফাশার ছিল সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ শক্ত ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ১৮ মাসের অবরোধ শেষে এই শহরটি দখল করে নেয় আরএসএফ বাহিনী। এরপর থেকেই শুরু হয় নির্বিচার গণহত্যা ও নির্যাতনের মিছিল।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এখন পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অসংখ্য নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
পালিয়ে বেঁচে যাওয়া কয়েকজনের বর্ণনা আরও ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের মধ্যে আলখেইর ইসমাইল নামের এক তরুণ জানিয়েছেন, পালানোর সময় প্রায় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ বাহিনী। তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান—কারণ আটককারী একজন তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী ছিলেন। কিন্তু তার সঙ্গে আটক হওয়া বাকিদের হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে ফাতিমা আবদুল রহিম, যিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে তাবিলা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে পায়ে হেঁটে এসেছি। পথে মৃতদেহের পাশে রাত কাটাতে হয়েছে।
একজন ২৬ বছর বয়সী নারী জানান, তার স্বামী মুক্তিপণ দেওয়ার পরও হত্যার শিকার হন। আরেক নারী তাহানি হাসান বলেন,তিনজন আরএসএফ সদস্য আমাদের থামিয়ে পোশাক খুলে তল্লাশি নেয়। তারা আমাদের মারধর করে এবং অপমান করে। আমি নারী হয়েও নিরাপদ ছিলাম না।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষায়, বন্দিদের গুলি ছাড়াও গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আরএসএফ বাহিনী শহরের চারপাশে গভীর পরিখা খনন করেছে, যাতে কেউ পালাতে না পারে। মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, এটি এক ধরনের কৌশলগত অবরোধ—যেখানে খাদ্য, পানি ও ওষুধ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এল-ফাশারে এখন অনাহারই নতুন অস্ত্র।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, এল-ফাশারে যা ঘটছে, তা “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ”-এর শামিল। ২৬ অক্টোবরের পর থেকে শহরজুড়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, মুক্তিপণ আদায় ও জোরপূর্বক নিখোঁজের ঘটনা একে একে প্রকাশ্যে আসছে। হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ, অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন তাবিলা ও আশপাশের গ্রামে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এল-ফাশার এখন এক ‘লাশের শহর’। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই এলাকায় কোনো বাড়িঘর অক্ষত নেই, হাসপাতাল ও স্কুলগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবিক সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ আর অনিরাপদ পরিবেশের কারণে।
বিশ্লেষকদের মতে, সুদানে চলমান এই সংঘাত দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে—যেখানে জাতি, ধর্ম বা বয়সের পার্থক্য না রেখে মানুষ মারা যাচ্ছে কেবল অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে।
মন্তব্য করুন
 
                    