

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দারফুরের উত্তরাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর দখলে যাওয়ার পর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সুদান। শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে আছে শত শত মরদেহ, আর আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, আরএসএফের সহিংস অভিযানের পর অন্তত ৬০ হাজার বাসিন্দা শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
এদের অধিকাংশ পশ্চিম দিকের তাউইলা শহরে আশ্রয় নিয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র ইউজিন বায়ুন জানান, পালিয়ে আসা লোকজন নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
এদিকে সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, শহর দখলের পর থেকে আরএসএফ বাহিনী ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৪৬০ জনকে হাসপাতালের ভেতরেই হত্যা করা হয়।
স্থানীয় সূত্র বলছে, অনেক মরদেহ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে, কেউ কেউ জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
গত ১৮ মাস ধরে এল-ফাশের শহরটি আরএসএফের অবরোধে ছিল, ফলে খাদ্য ও ওষুধের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়। এখন অবরোধ ভাঙলেও পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, শহরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এখনো আটকা রয়েছে এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, পানি কিংবা চিকিৎসাসেবা নেই।
ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র আরও বলেন, “প্রতিটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। আমরা পর্যাপ্ত আশ্রয় বা খাবার দিতে পারছি না।”
দারফুরে বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে, হাসপাতালগুলো অচল হয়ে আছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
স্মরণ করা যায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ-এর মধ্যে ক্ষমতা দখল নিয়ে সংঘাত শুরু হয়, যা দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এখন পর্যন্ত এ সংঘাতে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট।
এল-ফাশেরের পতনের পর সুদান কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে— পশ্চিম ও দক্ষিণ কর্ডোফান অঞ্চল এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে, আর সেনাবাহিনী ধরে রেখেছে রাজধানী খার্তুমসহ মধ্য ও পূর্বাঞ্চল।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন, তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানিয়েছে। তবে এখনো কোনো বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন— যদি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ না আসে, তবে সুদান দ্রুতই রুয়ান্ডার গণহত্যার মতো এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য করুন
