

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি। তবে এই আলোচনার মধ্যেই দলটির অভ্যন্তরে মতভেদ প্রকাশ্যে এসেছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতা দল ও নেতৃত্বকে “ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে” বলে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতায় গেলে এনসিপির আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা দল ছাড়তে পারেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে-দলের ভেতরে ঐকমত্য না থাকলেও কেন এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটছে?
‘নতুন রাজনীতি’র প্রতিশ্রুতি বনাম পুরোনো সমীকরণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতিতে ‘নতুন বন্দোবস্ত’ আনার ঘোষণা, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা এবং সরকার গঠনের আত্মবিশ্বাস দেখালেও শেষ পর্যন্ত কয়েকটি আসনের হিসাব-নিকাশে পুরোনো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলোচনায় বসা এনসিপিকে বিতর্কিত অবস্থানে ফেলছে।
তবে এনসিপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সংস্কার ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে অবস্থানগত মিল থাকায় দলটি ওই দিকেই তুলনামূলকভাবে আগ্রহী।
অনেকের মতে, বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়াও জামায়াতের দিকে এনসিপির ঝোঁকার একটি বড় কারণ।
বিশ্লেষকদের প্রশ্ন: আদর্শ না কি ক্ষমতার রাজনীতি?
গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে পরিবর্তনের যে অঙ্গীকার এনসিপি করেছিল, বাস্তব কর্মকাণ্ডে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না-এমন মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাদের মতে, গতানুগতিক ক্ষমতার রাজনীতির পথেই হাঁটছে দলটি।
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেই এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার দিকে যাচ্ছে। যদিও এতে দলটির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও সতর্ক করছেন কেউ কেউ।
এনসিপির বক্তব্য কী?
গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের পর জুলাই আন্দোলনের পরিচিত মুখদের নিয়ে গঠিত হয় এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
শুরু থেকেই দলটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত-এমন অভিযোগ এবং ‘জামায়াতের বি-টিম’ তকমাও পেতে হয়েছে এনসিপিকে।
তবে এনসিপির দাবি, সংস্কার প্রশ্নে মতপার্থক্যের কারণে তারা কখনোই ইসলামপন্থি আট দলের যুগপৎ আন্দোলনে যায়নি। পরে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠিত হলেও, এর অল্প সময়ের মধ্যেই জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা সামনে আসে।
এ বিষয়ে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি শুরু থেকেই এককভাবে বা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে উন্মুক্ত। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে সংস্কার প্রশ্নে যে দলগুলো বেশি আন্তরিক, তাদের সঙ্গেই সমঝোতার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির সঙ্গে বেশ কিছু মতভেদ দেখা গেলেও এনসিপি ও জামায়াতের অবস্থান কাছাকাছি ছিল।
বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় জামায়াত?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী হয়েছে এনসিপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক মনে করেন, ভোটের অঙ্কে জামায়াতের কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি আসনের সম্ভাবনা দেখেই এই সিদ্ধান্তে এগোচ্ছে দলটি।
যদিও এর আগে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেছিলেন, তারা আসনের হিসাব মাথায় রেখে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না এবং ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য নয়।
নেতৃত্ব ছাড়ছেন কেন?
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনার মধ্যেই দলের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। এর আগেও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা দল ত্যাগ করেন। আলোচনা চূড়ান্ত হলে পদত্যাগের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির সামনে নিজস্ব ভোটব্যাংক গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও দলটি সেই পথে না গিয়ে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতেই ঝুঁকেছে। জামায়াতের সঙ্গে জোট হলে এনসিপির সমর্থন আরও কমতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
তাদের মতে, যারা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন, তারাই দল ছেড়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, এনসিপি শুরু থেকেই ‘নতুন বন্দোবস্ত’ কী—তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। ফলে এখন ক্ষমতার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া তাদের জন্য অস্বাভাবিক নয়। বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন

