

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন সমঝোতা নিয়ে চাপে পড়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী ঘরানার আটটি দল। একাধিক দফা বৈঠক হলেও একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। বিশেষ করে চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উচ্চ আসন দাবি এই অচলাবস্থার প্রধান কারণ বলে জানা গেছে।
জোটসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সমঝোতা প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের কথাও ভাবছে। এই সম্ভাবনার পেছনে কোনো বিশেষ মহলের নীরব আশ্বাস থাকতে পারে—এমন আলোচনাও রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে।
এর মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে তারা প্রায় ৫০টি আসনের প্রত্যাশা করছে বলে জানা গেছে। এনসিপি যুক্ত হলে অন্য দলগুলোর জন্য ছাড় আরও বাড়াতে হবে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি দলও সমঝোতার আগ্রহ দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে জামায়াতকেন্দ্রিক এই নির্বাচনী সমীকরণে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি—এই দলগুলো সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। লক্ষ্য ছিল ইসলামী দলগুলোর ভোট এক জায়গায় এনে সরকার গঠনের পথে এগোনো। তবে শেষ সময়ে এসে আসন বণ্টন নিয়ে মতবিরোধ সেই উদ্যোগকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে।
সূত্র জানায়, ইসলামী আন্দোলন শতাধিক আসনের দাবি জানিয়েছে, আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চাইছে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি আসন। খেলাফত মজলিসের অন্য অংশ এবং আরও কয়েকটি দলও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন দাবি করায় জামায়াতের জন্য নিজের কাঙ্ক্ষিত আসন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। জামায়াত যেখানে প্রায় ২০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়, সেখানে অন্যদের দাবি মানলে তাদের অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
তবে প্রকাশ্যে জোট ভাঙার কথা কেউই স্বীকার করছেন না। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আট দলের সমন্বয়ক ড. হামিদুর রহমান আযাদ দাবি করেছেন, আলোচনা ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে। তার ভাষায়, “কোনো দলের জন্য নির্দিষ্ট আসন নেই, আসন সবার। সবাই ছাড় দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাবে।”
তিনি আরও জানান, এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে এবং খুব শিগগিরই সমঝোতার চূড়ান্ত রূপ স্পষ্ট হবে।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলছেন, আলোচনা চলমান থাকায় এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বলা যাবে না। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ জানিয়েছেন, নতুন দল যুক্ত হওয়ায় আলোচনা স্বাভাবিকভাবেই সময় নিচ্ছে, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত জটিলতা তৈরি হয়নি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, তারা ঐক্য ধরে রাখতে চান, তবে সেটি অবশ্যই দলের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে। সম্মানজনক আসন না পেলে বিকল্প পথ ভাবা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
দলটির মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ জানান, শীর্ষ পর্যায়ে আরও বৈঠকের মাধ্যমে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
সবশেষে খেলাফত মজলিসের আরেক নেতা ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, এখনো আলোচনার সময় আছে এবং মনোনয়ন জমার পরও কিছু আসনে সমঝোতা হতে পারে। তার মতে, কিছু মতভেদ থাকলেও এই ঐক্য ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত কম।
সূত্র, আমার দেশ
মন্তব্য করুন
