শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আলোচনার দরজা খোলা রাখছে বিএনপি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৬ এএম
বিএনপির লোগো
expand
বিএনপির লোগো

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিতর্ক চলছে, তার মধ্যেও সংলাপ ও আলোচনার পথ খোলা রাখছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সুপারিশে নিজেদের দেয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, বিএনপি বলছে- তারা আলোচনার টেবিল ছেড়ে যেতে চায় না।

দলটির নেতারা মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই এই সনদ বাস্তবায়নের গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা সম্ভব। এজন্য তারা সরকারের কাছে আশা করছে, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা আহ্বান এলে বিএনপি তাতে সাড়া দেবে বলেও জানানো হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিএনপি চায়, নির্বাচনের সময়সূচি অনুযায়ী ভোট অনুষ্ঠিত হোক। তবে জুলাই সনদের আইনি বৈধতা নিশ্চিত করতে আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮টি রাজনৈতিক দল। বিএনপি এ ইস্যুতে এখনই কোনো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে না।

যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে, সেটিকে ধরে রাখতেই আমরা আপাতত কর্মসূচি দিচ্ছি না, বলেছেন বিএনপি নেতারা। তারা চান, আলোচনার মাধ্যমে যে সমঝোতা তৈরি হয়েছে, সেটির ভিত্তিতেই জুলাই সনদ সফলভাবে বাস্তবায়ন হোক।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মতপার্থক্য থাকলেও আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছি। জনগণ যদি নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের ভোট দেয়, তবে সেই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। আমরা সেটিকে সংসদে পাস করিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোয় পরিবর্তন আনব।

বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে প্রকাশিত এক পোস্টে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করলে তা হবে সবচেয়ে যৌক্তিক, সাশ্রয়ী ও বাস্তবসম্মত।

তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী একদিনে ভোট আয়োজন করলে সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হবে; আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার নেই। দুটি ব্যালট পেপার ব্যবহার করলেই ভোট সম্পন্ন করা সম্ভব, এতে সরকারের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে।

তারা মনে করে, আগে গণভোট হলে নির্বাচন পেছানোর ঝুঁকি রয়েছে, যা গণআন্দোলনের গতিও শিথিল করতে পারে। বিএনপির আশঙ্কা, আওয়ামী লীগসহ কিছু পক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার চেষ্টা করতে পারে। গত ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে যায়।

পরবর্তীতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বাস্তবায়ন সুপারিশ তুলে দেন। এতে বলা হয়, সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে বা উপযুক্ত সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এতে আরও প্রস্তাব দেওয়া হয়, নতুন সংসদ প্রথম ৯ মাস সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে এবং গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। সময়সীমা পেরিয়ে গেলে সেই বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে সংযোজিত হবে।

এই প্রস্তাবের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির টানা দুদিনের বৈঠকে নেতারা অভিযোগ তোলেন, তাদের ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উপেক্ষা করা হয়েছে।

তবুও দলটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না যাতে মনে হয় বিএনপি সংস্কারের বিরোধী বা গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের বিপক্ষে।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো বাদ দিয়ে কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এতে ঐক্যের বদলে বিভক্তির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এমন প্রস্তাব জাতিকে বিভাজিত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রজীবনে অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার ও কমিশনের উচিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া। যদি অভিযোগ সঠিক হয়, তাহলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসা প্রয়োজন। আর যদি ভুল হয়, তাহলে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটানো উচিত।

তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু সুপারিশমালা সরকারের কাছে, তাই গণভোটের সময়সূচি ও পদ্ধতি নিয়ে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া সরকারেরই দায়িত্ব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে যেসব সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, তার ভিত্তিতে নোট অব ডিসেন্টসহ প্রণীত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ। আর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই বিএনপির অবস্থান।’

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন