শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির ২৫০ আসনে একক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত, ওইসব প্রার্থী হলেন যারা 

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১২ পিএম
বিএনপি
expand
বিএনপি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুত গতি পেয়েছে বিএনপির প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। দলটি চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রায় আড়াইশ (২৫০) আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম হাইকমান্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে-অর্থাৎ তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে এই সময়ের মধ্যেই।

দলীয় সূত্র জানায়, এবার প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সমন্বয় বজায় রাখা–কে। তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতে, আগেভাগে প্রার্থী নির্ধারণ করা গেলে তৃণমূলের বিরোধ ও বিভাজন অনেকটাই কমে আসবে। এজন্যই একক প্রার্থীকে আগে থেকে মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

তবে জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র শীর্ষ কয়েক নেতার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করবে না। একইভাবে জোটভুক্ত অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে।

মনোনয়নপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার গুলশান কার্যালয়ে মাগুরা, চট্টগ্রাম ও সুনামগঞ্জের কয়েকটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের হাইকমান্ড। এসব আসনের বেশিরভাগেই অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকায় সেগুলো মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এর আগের দিন রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট বিভাগের চার জেলার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি, প্রচারণা কৌশল ও সংগঠনগত ঐক্য বজায় রাখার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগ বাদে দেশের প্রায় সব বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগিরই পর্যায়ক্রমে ঢাকা বিভাগের আসনভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও ডাকা হবে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘চমক বলতে ইয়াং জেনারেশন এবার আগের চেয়ে আরেকটু বেশি অগ্রাধিকার পাবে। কারণ, তারা অনেক বেশি অ্যাকটিভ। নারীরাও যথেষ্ট অগ্রাধিকার পাবে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এলাকায় সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থীরাই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন। একই আসনে অনেক প্রার্থী থাকতে পারেন। সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি জনগণের কাছে কার অবস্থান ভালো। এলাকায় কে বেশি জনপ্রিয়, সেই খোঁজখবর নিচ্ছি। এজন্য তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সিনিয়র নেতারা যার যার দায়িত্ব পালন করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান কার্যালয়ে ডাকা অন্তত দশজন সম্ভাব্য প্রার্থী জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিটি আসনে ৪ থেকে ৫ জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। এর মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাই করে ২ থেকে ৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ডাকা হয়। সভায় বিএনপির মহাসচিব দলীয় একক প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনার জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশনা দেন।

সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, তাদের সঙ্গে বৈঠক বলা হয়েছে একক প্রার্থী দেওয়া হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনগণকে সন্তুষ্ট এবং ভোটারদের মন জয় করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কয়েকটি আসনে ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে একক প্রার্থীকে ফোন করে মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলে তাদের ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন।

ওইসব প্রার্থী হলেন—বগুড়া-১ আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-২ আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মীর শাহে আলম, বগুড়া-৩ আসনে আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার, বগুড়া-৪ আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন এবং বগুড়া-৫ আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। বিষয়টি নিশ্চিত করে মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে জানান, ৫টি আসনে একক প্রার্থী হিসাবে ৫ জনকে মাঠে কাজ করার জন্য জানিয়ে দিয়েছেন। বাকি বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন দুটি জিয়া পরিবারের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, সবাইকে আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ভূমিকা নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন। যারা মনেপ্রাণে বিএনপি করেন, তাদের দলের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।

সিরাজগঞ্জের ৬টি আসনের মধ্যে ৫টির একক প্রার্থীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনি মাঠের কাজ আরও জোরদার করতে বলেছেন দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা পেয়ে স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য তাদের এ বার্তা দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত তারা দলের হাইমান্ডের কাছ থেকে সরাসরি কোনো কল পাননি।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবারও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনি গণসংযোগ করছেন। এছাড়াও সাতক্ষীরার একটি, নাটোরের একটি এবং ঢাকার ৫টি আসনেরও একক প্রার্থীকে মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে প্রার্থী মনোনয়নে তরুণদের আগ্রাধিকার দেবে বিএনপি। প্রায় প্রতিটি আসনেই এবার তরুণ প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। অনেক আসনে আছেন একাধিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, জেন-জি ও তারুণ্যের এবার ভোট বেশি। সে বিবেচনায় এবার তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু আসনে স্থানীয়ভাবে অনেক জনপ্রিয় নেতা রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের একদিকে রয়েছে ক্লিন ইমেজ, আবার কর্মীবান্ধবও। এ ধরনের তরুণ নেতাদের প্রার্থী করা হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত হবে। তবে প্রার্থী নির্ধারণে যদি ভুল সিদ্ধান্ত হয়, সেক্ষেত্রে ওইসব আসনে প্রার্থীর বিজয় নাও হতে পারে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন