শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিপর্যয়ের মুখে আমাদের 'দ্বিতীয় গৃহ'

নোমান সেলিম, সিনিয়র সাংবাদিক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম
জাতীয় প্রেসক্লাব
expand
জাতীয় প্রেসক্লাব

সাংবাদিকদের কাছে জাতীয় প্রেসক্লাব ‘দ্বিতীয় গৃহ’ বা ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৩ সালে গৌরবময় এ গৃহের সদস্য হওয়ার পর দেখেছি, ক্লাবটির মেম্বার লাউঞ্জে চায়ের টেবিলে বসে আড্ডা দিতেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। মাঝেমাঝে দূরের সোফায় চুপচাপ বসে তাঁদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ও যুক্তিতর্ক শুনেছি। একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করেন এখন তাঁদের কেউ কেউ অবসরে, কেউবা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন।

বেয়াদবি হবে, এটা ভেবে কখনও তাদের সোফায় বসিনি। কিছু জানার প্রয়োজন হলে দূরত্ব বজায় রেখে নতমস্তকে প্রশ্ন করতাম। পরম স্নেহে পিঠে বা কাঁধে হাত রেখে তাঁরা জবাব দিতেন। জনাব এবিএম মুসা, আতাউস সামাদ স্যার, গিয়াস কামাল চৌধুরী, রিয়াজ ভাই, আমান উল্লাহ কবীর ভাই, মোজাম্মেল ভাইসহ অনেকের পরম আদর- স্নেহ ও ভালোবাসা পেতে আমাদের জুনিয়রদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলতো।

এসব গুণী সাংবাদিকদের দু-একটি ঘটনা বলে মূল প্রসঙ্গে আসি। একবার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লা এলেন। তাঁর কণ্ঠে সরাসরি গান শুনব ভেবে আমাদের বেশ উৎসাহ। নির্দিষ্ট সময়ে রুনা লায়লা মঞ্চে উঠলেন। একের পর এক গান গেয়ে চলেছেন। তাঁর সুরের মূর্ছনায় পুরো ক্লাব অঙ্গন মাতোয়ারা। ঠিক এ সময়ে প্রবীণ সাংবাদিক ও গীতিকার আহমদ জামান চৌধুরী খোকা ভাই অনুষ্ঠানস্থলে এলেন। খোকা ভাইকে দেখেই রুনা লায়লা গান থামিয়ে তাঁকে সালাম করলেন।

অসুস্থ খোকা ভাইকে কয়েকজন সাংবাদিক কোলে করে মঞ্চে তুলে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। পুনরায় গান শুরুর আগে রুনা লায়লা ঘোষণা দিলেন, ‘আমি আজ খোকা ভাইয়ের লেখা গান ছাড়া আর কোনো গান গাইব না।’ আমার যতটুকু মনে পড়ে এরপর তিনি ১৭টি গান গেয়েছিলেন। আমি এর আগে জানতাম না, জনপ্রিয় এসব গান খোকা ভাইয়ের লেখা! এ বৃষ্টিভেজা রাতে চলে যেও না, মাগো তোর কান্না আমি সইতে পারি না, চুরি করেছো আমার মনটা.. গানের সাথে যেন সুরের আবেশে মেতে উঠেছিল পুরো প্রেসক্লাব অঙ্গন।

আরেকদিন প্রেসক্লাবের বিশাল টিভিতে ‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো, চাঁদ বুঝি তা জানে- গানটি বাজছিল। টিভি রুমে ওই সময় প্রবীণ সাংবাদিক ও গীতিকার কে জি মোস্তফা ভাইও ছিলেন। গানটি শেষ হতেই সাংবাদিকরা একযোগে কেজি ভাইকে ঘিরে ধরে গানটির তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলেন। ওইদিনই জানতে পারলাম- কালজয়ী এ গানটি কেজি মোস্তফা ভাই লিখেছেন।

খ্যাতিমান সাংবাদিকদের অনেকেই ইজ্জত নিয়ে এ দুনিয়ার সফর শেষ করে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তাদের অনেকেই এখন আর প্রেস ক্লাবে খুব একটা আসেন না।

একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে কিছু দিন আগে ফোনে কথা হলো। প্রেস ক্লাবে না আসার কারণ জানতে চাইলে বললেন গত ৮/১০ বছর ধরে যাদের সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেই কখনোই কোনো গণমাধ্যমে কাজ করেননি। এখনো করছেন না। হয়তো ভবিষ্যতেও করবেন না। অপরিচিত সদস্যরা বখে যাওয়া সন্তানের মতো লাউঞ্জে পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে যেভাবে বসে, হয়তো কখনো তাদের পা আমাদের মাথায় লাগতে পারে। মান মর্যাদা নিয়ে দূরে থাকাই ভালো মনে করছি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন